একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর উজানে ৩০ কিলোমিটার এলাকায় পানি নেই। আছে বালুচর। কোথাও কোথাও পানির ধারা আছে বটে তবে বেশিরভাগ এলাকায় নদীর তলদেশ দেখা যাচ্ছে । সেখানে আবার ফাটলও দেখা দিয়েছে। এলাকার সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, ফটিকছড়ির ভূজপুর থেকে শুরু করে নাজিরহাট এলাকা পর্যন্ত হালদা নদীর প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা এখন অনেকটা পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানি সংকটের কারণ হচ্ছে রাবার ড্যাম, নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন, চা বাগানে পানি নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে মৎস্য সম্পদ। অন্যদিকে সেচের পানির জন্য নদীপাড়ের মানুষের মাঝে হাহাকার চলছে।
স্থানীয়রা বলছেন, হালদার চরের জমিতে সবজির চাষ হতো। নদীর পানিই ছিল চরের উর্বরা শক্তির মূল উৎস। তখন পানির অভাব ছিল না। ফলে চরে সবজি চাষ করে সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করা যেতো। কিন্তু বর্তমানে পানি না থাকায় চরের জমিতে সবজির চাষ করা যাচ্ছে না। ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান জানান, ফটিকছড়ি উপজেলার সমিতিরহাট, রোসাংগিরি, দৌলতপুর, সুয়াবিল, ধুরুং, সুন্দরপুর, ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি, পাইন্দং, নারায়ণহাটসহ কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার কৃষক চরের প্রায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির ফসল উৎপাদনে সেচের পানির জন্য হালদা নদীর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। কিন্তু গত এক দশকে হালদা নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এখানে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফসলি জমি অনেকটাই অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়েছে।
হালদা খালের উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের পাহাড়ি গ্রাম সালদা। সালদার পাহাড়ি ঝরনা থেকে নেমে আসা ছড়া সালদা থেকে নামকরণ হয় হালদা। এটি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বুড়িশ্চরে কর্ণফুলী নদীতে মিলিত হয়েছে। হালদার দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৫ কিলোমিটার। পানির উৎস মানিকছড়ি, ধুরুং, বারমাসিয়া, মন্দাকিনী, লেলাং, বোয়ালিয়া, চানখালী, সর্ত্তা, কাগতিয়া, সোনাইখা,পারাখালী, খাটাখালীসহ বেশ কিছু খাল ও ছড়া।
হালদা হলো বিরল বৈশিষ্ট্যের নদী। বিশ্বের একমাত্র জোয়ার–ভাটা সমৃদ্ধ হালদা নদী স্বাদু পানির মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। নদীটির উৎপত্তি আর সমাপ্তি দুটিই দেশের ভেতরে। রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয় এ নদী থেকে। হালদা নদী বাংলাদেশের সাদা সোনার খনি হিসেবেও পরিচিত। হালদা নদী থেকে প্রতি বছর এক হাজার কোটি টাকা জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ হতো। এ নদী শুধু মৎস্য সম্পদের জন্য নয়; যোগাযোগ, কৃষি ও পানি সম্পদেরও একটি বড় উৎস।
এখন সে হালদা শুকিয়ে যাচ্ছে এই সংবাদটি আমাদের জন্য কত বড় অশনি সংকেত তা বোধহয় আমরা এখনো অনুধাবন করতে পারছি না। আর কতটা ক্ষতি হলে আমরা তৎপর হবো? আর কতটা ক্ষতি হলে আমরা সচেতন হবে তা বুঝতে পারছি না।