হালদার নাব্যতা রক্ষায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে

বালুতে ভরাটের কারণে নাব্যতা হারাচ্ছে হালদা। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা পাড়ের বাসিন্দা, ডিম সংগ্রহকারী ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, নদীর অনেক স্থানে হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি।
শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা হারানো নদীর দুরবস্থা বেশি চোখে পড়ে। আগে ডিম সংগ্রহের মৌসুমে নব্বই থেকে একশ বিশ ফুট গভীরে নৌকার নোঙর ফেলা হতো। এখন তা ত্রিশ ফুটে এসেছে। স্বাভাবিক জোয়ারের পানি যে এলাকায় কখনো প্রবেশ করেনি, এখন ওইসব এলাকার রাস্তাঘাট, উঠান তলিয়ে যায়। এতে করে হালদাপাড়ে ক্ষেতখামার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে মরিচের চাষ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রায় এক দশক আগে থেকে।
হালদাপাড়ের বাসিন্দা ও গড়দুয়ারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরোয়ার মোর্শেদ তালুকদার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, হালদার উৎপত্তিস্থল পাহাড়। তাই প্রতিনিয়ত পাহাড়ের বালু হালদায় এসে পড়ছে। অন্যদিকে হালদা নদীর সাথে অনেকগুলো শাখা খালের সংযোগ রয়েছে। শাখা খালের বালু, আবর্জনা এবং বর্জ্য এসে পড়ছে হালদায়। ড্রেজার দিয়ে খননে হালদা ও তার পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা সত্য। কিন্তু প্রশাসন পরিকল্পনা করে যদি ম্যানুয়ালি তথা ডুবুরি দিয়ে বালু উত্তোলনের ব্যবস্থা করে তাহলে ক্ষতি কোথায়? এতে হালদা যেমন গভীরতা ফিরে পাবে, তেমনি কিছু বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। একইসাথে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করলে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা পড়বে। তার বক্তব্যটি বাস্তবসন্মত ও প্রণিধানযোগ্য।
হালদাপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, যারা সবসময় হালদার খবর রাখেন তারা এসব বিষয়ে জানেন। হালদা নদী খননে ব্যবস্থা না নিলে মা মাছের ডিম ছাড়ার হাতেগোনা যে কয়টি কুম (ডিম ছাড়ার নির্দিষ্ট স্থান) রয়েছে তা-ও ভরাট হয়ে যাবে। আর কুম বিলীন হলে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়বে না। প্রাকৃতিকভাবে এক সময় হালদায় তাদের আগমন বন্ধ হয়ে যাবে। যার জন্য হালদা আজ দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বে পরিচিত, সেই পরিচিতিও মুছে যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রুইজাতীয় মাছের প্রকৃত বংশধরদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য হালদা নদীর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের বিকল্প নাই।
হালদা নদীকে বলা হয় চট্টগ্রামের ‘লাইফ লাইন’। চট্টগ্রাম শহরে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ বসবাস করে। তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে, তার মধ্যে প্রতিদিন ১৮ কোটি লিটার পানি হালদা থেকে সংগ্রহ করা হয়। চট্টগ্রাম শহর গড়ে উঠেছে কর্ণফুলী নদীর পাশে। এর এক পাশে বঙ্গোপসাগর। এর মধ্যে ‘ফ্রেশ ওয়াটার সোর্স’ হচ্ছে হালদা নদী। কোনো কারণে যদি হালদা বিপন্ন হয়, তাহলে চট্টগ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন হবে। হালদা নিয়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে মাতামাতি থাকলেও খননে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না কেউ। হালদাপাড়ের বাসিন্দা, ডিম সংগ্রহকারী, জনপ্রতিনিধি সবাই বলছেন, হালদা নদী খননে ব্যবস্থা না নিলে হারিয়ে যাবে নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ। কাজেই হালদার নাব্যতা রক্ষায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা ছাড়া উপায় নেই।