হালদার দূষণরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

হালদা নদীতে আবারও বেড়েছে মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যুর ঘটনা। গত এক সপ্তাহে নদীর বিভিন্ন অংশে মৃত চারটি মা মাছ ও একটি ডলফিন ভেসে উঠেছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরির হিসাব অনুযায়ী, গত সাড়ে পাঁচ বছরে হালদা নদীতে অন্তত ৪৩টি ডলফিন এবং ২৫ থেকে ৩০টি বড় মা মাছের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ মৃত্যুই ছিল অস্বাভাবিক। মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যুর পেছনে যেসব কারণ শনাক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে আঘাত, শ্বাসকষ্ট ও দূষণ।
গবেষকেরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, এবার সেসব মৃত্যুর জন্য দায়ী পানিদূষণ। নদীর পানির নমুনা পরীক্ষায়ও এর সত্যতা মিলেছে বলে জানান তাঁরা।
নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ প্রতি লিটারে ৩ দশমিক ৬ মিলিগ্রামে নেমে এসেছে। এর আদর্শ মান ৫ মিলিগ্রাম। পানিতে মুক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইডের মান স্বাভাবিকের (প্রতি লিটারে ৫-১০ মিলিগ্রাম) তুলনায় বেড়ে প্রতি লিটারে ২০ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। আবার পিএইচের মান স্বাভাবিক সর্বনিম্ন সীমার (৬ দশমিক ৫) একদম কাছাকাছি (৬ দশমিক ৬)।
শুধু মৎস্য প্রজনন নয়, নগরে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রেও এই নদীর অবদান ব্যাপক। কিন্তু দুঃখজনক হলো, কোনোভাবে নদীর দূষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও বাহির সিগন্যাল, অক্সিজেন, কুলগাঁও-সংলগ্ন বেশ কিছু কলকারখানা থেকে ৬ থেকে ৮টি খাল দিয়ে বিষাক্ত ও তৈলাক্ত বর্জ্য নদীতে পড়ছে। এ ছাড়া হাটহাজারীর খন্দকিয়া, কৃষ্ণ, কাটাখালী ও বাথুয়া খাল দিয়ে নদীতে পড়ছে গৃহস্থালি বর্জ্য। এসব দূষণ থেকে নদীকে রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা হতাশজনক।
৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটির জলজ প্রাণী রক্ষায় সরকার ২০০৭ সালে নদীর কর্ণফুলীর মোহনা থেকে ফটিকছড়ি, নাজিরহাট পর্যন্ত এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে নদীর সব স্থানে বালুর ইজারা মহাল তুলে নিয়ে বালু উত্তোলন এবং বালুবাহী ড্রেজার, যান্ত্রিক নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। জাল পাতার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এসব উদ্যোগের কারণে মা মাছের মৃত্যু কমে এসেছিল।
হালদা নদীকে বলা হয় চট্টগ্রামের ‘লাইফ লাইন’। চট্টগ্রাম শহরে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ বসবাস করে। তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে, তার মধ্যে প্রতিদিন ১৮ কোটি লিটার পানি হালদা থেকে সংগ্রহ করা হয়। চট্টগ্রাম শহর গড়ে উঠেছে কর্ণফুলী নদীর পাশে। এর এক পাশে বঙ্গোপসাগর। এর মধ্যে ‘ফ্রেশ ওয়াটার সোর্স’ হচ্ছে হালদা নদী। কোনো কারণে যদি হালদা বিপন্ন হয়, তাহলে চট্টগ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন হবে।