নিজস্ব প্রতিনিধি, হাটহাজারী »
হালদা নদীতে বহু প্রতীক্ষার পর নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হালদা নদীর নয়াহাট এলাকার কয়েকটি পয়েন্ট থেকে নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। তবে বুধবার (১৭ মে) থেকে নদীর কিছু কিছু অংশে এ নমুনা ডিম পাওয়া যায় বলে কয়েকজন ডিম সংগ্রহকারী জানিয়েছেন। মেঘের গর্জন ও বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল হালদায় প্রবেশ করলে মা মাছ পুরোদমে ডিম দেবে বলে আশা করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।
প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী বাংলাদেশের মেজর কার্পজাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। হালদায় প্রতি বছর এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয় কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন মৌসুম। পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় এপ্রিল মাসের দুটি জো এবং মে মাসের পূর্ণিমার জো অর্থাৎ তৃতীয় জো (২ থেকে ৭ মে) অতিক্রম হলেও এখনো দেখা মিলছেনা কার্পজাতীয় মাছের কাক্সিক্ষত ডিম। তবে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া চতুর্থ জোঁ তে হালদা নদীতে মা-মাছ নমুনা ডিম দিতে শুরু করেছে।
গতকাল দুপুরে হালদা নদীর নয়াহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ডিম সংগ্রহকারীরা নদী পাড়ে অপেক্ষা করছেন। আবার কেউ কেউ নদী থেকে মা-মাছের নমুনা ডিম সংগ্রহ করছেন। মুষল ধারে বৃষ্টি, মেঘের গর্জন ও পাহাড়ি ঢল শুরু হলে রাতে অথবা আগামী কাল (শুক্রবার) মা-মাছ ডিম দিতে পাওে বলে জানিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।
প্রবীন ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগরবলেন, মা মাছ এখনো ডিম পুরোদমে ছাড়েনি। আরো দুই-একদিন মেঘের গর্জন ও বৃষ্টিসহ পাহাড়ি ঢল হালদায় প্রবেশ করলে ডিম দেবে মা মাছ। অনেক ডিম সংগ্রহকারী নদীতে জাল নিয়ে নামলেও ডিম পাননি। কয়েকজন ডিম সংগ্রহকারী সামন্য নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছেন।
হালদা থেকে সংগৃহীত মাছের ডিম থেকে উৎপাদিত রেণু, পোনার দেশজুড়ে চাহিদা রয়েছে। দামও ভালো পাওয়া যায়। সাধারণ হ্যাচারিতে কৃত্রিম পদ্ধতিতে উৎপাদিত পোনার চেয়ে হালদার পোনা দ্রুত বড় হয়। এতে মৎস্যচাষিরা লাভবান হয়।মূলত হালদার কাগতিয়ার আজিমের ঘাট, খলিফার ঘোনা, পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা, বিনাজুরী, সোনাইর মুখ, আবুরখীল, খলিফার ঘোনা, সত্তারঘাট, দক্ষিণ গহিরা, মোবারকখীল, মগদাই, মদুনাঘাট, উরকিচর এবং হাটহাজারী গড়দুয়ারা, নাপিতের ঘাট, সিপাহির ঘাট, আমতুয়া, মার্দাশা ইত্যাদি এলাকায় ডিম পাওয়া যায় বেশি।হালদা নদীতে মা-মাছ নমুনা ডিম দেওয়ার পর পর শত শত ডিম সংগ্রহকারী ডিম ধরার সরঞ্জাম নিয়ে নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছেন। মাছ পুরো দমে ডিম দিবে এই আশায় অপেক্ষায় রয়েছে ডিম সংগ্রহকারীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে হালদা নদীর গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হালদা নদীতে চলছে মেজর কার্পজাতীয় মাছের ভরা প্রজনন মৌসুম। এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া প্রজনন মৌসুমের তিনটি জোঁ অতিক্রম হলেও হালদায় দেখা মেলেনি কার্পজাতীয় মাছের কাক্সিক্ষত ডিমের। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া চতুর্থ জো এর রাতে হালদার কিছু কিছু স্পনিং গ্রাউন্ডে খুবই সামান্য পরিমাণে নমুনা ডিমের উপস্থিতি দেখা যায়। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ পাহাড়ি ঢল নামলে আজ কালকের মধ্যে ডিম ছাড়বে কার্পজাতীয় মা-মাছ।
হাটহাজারী উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) মো. শাহিদুল আলম বলেন, হালদা নদীতে মা-মাছের ডিম দেওয়া শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক ডিম সংগ্রহকারীদের সাথে যোগাযোগ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।