প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদায় আবারও মা মাছ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা মা মাছটি মৃগেল বলে জানিয়েছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর। ময়নাতদন্তে মাছটিতে প্রচুর পরিমাণ পরিপক্ব ডিম দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকা থেকে মাছটি উদ্ধার করেন নদীর স্বেচ্ছাসেবকেরা। মাছটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে স্বেচ্ছাসেবকেরা জানিয়েছেন। উদ্ধার হওয়া মাছটির ওজন ছিল প্রায় ছয় কেজি। রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, মৃত মা মাছটির পেটে প্রায় পৌনে এক কেজি ডিম ছিল। এই পরিমাণ ডিম থেকে দেড় লাখ রেণু উৎপন্ন হতে পারত।
একই স্থান থেকে গত ৪ মে ৫ কেজি ওজনের আরেকটি মরা মা কাতলা মাছ উদ্ধার করেছিলেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। এ ছাড়া গত বছরের জুন ও জুলাই মাসে ১২ দিনে ৬টি বড় মা মাছ ও ৩টি ডলফিন মরে ভেসে ওঠার ঘটনা ঘটেছিল।
বেশ কিছু দিন ধরে নদীতে একের পর এক মরা মা মাছ ভেসে যেতে দেখা যাচ্ছে। তবে ভেসে যাওয়া সব মা মাছ উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। কারণ, সব সময় স্বেচ্ছাসেবীরা থাকেন না। প্রায় সময় মৃত মাছ জোয়ারে ভেসে চলে যায়। হালদার মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হয়েছে। এ ছাড়া নদীর হাটহাজারীর রাম দাশ মুন্সিরহাট অংশে একটি নৌ পুলিশ ফাঁড়িও রয়েছে। তবে এরপরও মা মাছের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় লোকজন জানান নৌ পুলিশের তেমন তৎপরতা না থাকায় নদীতে জাল পাতা, মাছ শিকারসহ নানা অবৈধ কার্যক্রম চলছে।
একদিকে মা মাছ হত্যা চলছে যা থামানো যাচ্ছে না অন্যদিকে হালদায় প্রজনন মৌসুম শুরু হয়ে প্রায় দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও এর মধ্যে নমুনা ডিমও ছাড়েনি মা মাছেরা।
মা মাছ মরার এমন দুঃসংবাদে উদ্বিগ্ন নদী গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, প্রজনন মৌসুমের প্রায় এক মাস পার হয়ে গেল। এখনো নমুনা ডিমও ছাড়েনি মা মাছেরা। এর মধ্যে গত বছরের মতো একের পর এক মা মাছ মরা উদ্বেগের। কারণ, হালদার একেকটা মা মাছের ডিম থেকে কোটি টাকার মাছের উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রতিবছর।
দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী হালদা রক্ষায় নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা শোনা গেলেও কার্যত নদীটি অরক্ষিত ও অবহেলিত। অনেকে হালদা নিয়ে গবেষণা করে যথেষ্ট খ্যাতিও অর্জন করেছেন কিন্তু তারাও হালদা রক্ষায় যথেষ্ট আন্তরিক বলে মনে হয় না। আর সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া পদক্ষেপ শুধু ডিউটি রক্ষার মতই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
এ মুহূর্তের সংবাদ