দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় চৈত্র-বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত কার্পজাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে। হালদার পোনার বিশেষ চাহিদা আছে দেশজুড়ে এর স্বাদ ও আকার বড় হওয়ার কারণে।
প্রতিবছর হালদায় বিশেষ করে সত্তারঘাট ব্রিজ থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত নদীর এই অংশে মা-মাছ ডিম ছাড়ে। রুই, কাতলা, কালা বাউস ইত্যাদি মাচ ডিম ছেড়ে থাকে হালদায়। দেশের মৎস্য সম্পদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কারণে হালদা নদীকে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহে তার কার্যালয় থেকেই হালদা নদীর বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হয়ে থাকে। কিন্তু এরপরেও কিছু লোভী ও অসাধু ব্যক্তির দুর্বৃত্তায়ন তাতেও বন্ধ হয়নি। তারা সংঘবদ্ধভাবে হালদা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে এবং যান্ত্রিক নৌকায় তা পরিবহন করে। যদিও হালদা নদীতে বালু উত্তোলন ও যে কোন যান্ত্রিক নৌ চলাচল নিষিদ্ধ।
মাত্র কয়েকদিন আগে এমন একটি চক্রের হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে হালদার দুষ্প্রাপ্য একটি ডলফিনকে। সোমবার মারা গেছে একটি মা মাছ। কয়েকদিন আগে হালদাবাঁধে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছিল ১৪ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ। সত্তারঘাট ব্রিজের কাছে নদীতে ভাসতে দেখে মাছটি উদ্ধার করে মধুনাঘাট হ্যাচারিতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাছটি মারা যায়। পরে সেটি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে হস্তান্তর করা হয়।
এখন ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম। সংগ্রহকারীরা প্রতিবছর এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে। প্রাকৃতিক এই মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রটি একসময় মনুষ্যসৃষ্ট দূষণের কারণে মা মাছের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছিল। সে কারণে নদীতে ডিম ছাড়ার পরিমাণ অস্বাভাবিক ভাবে কমে গিয়েছিল। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজরের কারণে প্রশাসন কঠোর ভূমিকা পালন করে এবং মা মাছ ও পরিবেশ রক্ষায় কড়াকড়ি আরোপ করে। এতে সুফল পাওয়া যায়। মাছের ডিম ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। পোনা সংগ্রহও বাড়তে থাকে।
কাজেই এই ধারাবাহিকতা ক্ষুন্ন করা যাবে না। মাছ এবং দুষ্প্রাপ্য ডলফিন রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিতে হবে এবং সে সঙ্গে দোষী ও পরিবেশ বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং তা অতি সহসা। দেরি হলে ডিম ছাড়ার মৌসুম পেরিয়ে যাবে।