সিনেমা বিনোদনের মাধ্যম। একটা সময় ছিলো যখন নতুন নতুন সিনেমা দেখার জন্য মুখিয়ে থাকতো। সিনেমা নিয়ে কত গল্প, কত যে জনশ্রুতি। নায়ক-নায়কিদের মত করে নিজেদের সাজাতো। কে কতবার কোন সিনেমা দেখেছে এটা ছিল আড্ডার অন্যতম বিষয়। সিনেমার সেই সোনালি সময় শুধুই অতীত। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলা সিনেমার অবস্থা বেশ খারাপ। ভালো মানের সিনেমার অভাবে দর্শক হয়েছে হলবিমুখ। আর দর্শক হারিয়ে হলগুলো একে একে বন্ধ হয়েছে। আকাশ সংস্কৃতি সবকিছুকে বোকা বাক্স (টেলিভিশন) মুখি করেছে। চলচ্চিত্রের এই অবস্থা থেকে উত্তরণে চলছে নানা চেষ্টা।
আগে থেকেই ধুঁকছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, মহামারী তা করে তুলেছিল নাজুক। বছরের শুরুতে মহামারীর খাঁড়া কাটিয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গন সচল হলেও চলছিল ঢিমেতালে। মাঝামাঝিতে এসে পরাণ নাড়া দেয় চলচ্চিত্র অঙ্গনকে, তারপর হাওয়া বইয়ে দেয় দর্শকের জোয়ার। এরপর আবার ভাটা।
সম্প্রতি ছন্দে ফিরছে বাংলা সিনেমা। হারিয়ে যাওয়া ‘হাউজফুল’ শব্দটি ফিরে এসেছে বাংলা সিনেমায়। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশের ১৬৯টি প্রেক্ষাগৃহে পাঁচটি চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়া হয়। যার মধ্যে চার ভাগের তিন ভাগ হল দখল করে নেয় দুটি সিনেমা। এ ছাড়া বাকি তিনটি সিনেমা নিজেদের মতো করে দর্শক চাহিদা পূরণ করে চলেছে। মন্দ আবহাওয়ার মধ্যেও দর্শক হলে ছুটে গেছে। টিকিটের হাহাকার দেখা গেছে সর্বত্র। সিঙ্গেল স্ক্রিনের পাশাপাশি সিনেপ্লেক্সগুলোতেও প্রথমবারের মতো দেখা গেল বাংলা সিনেমার একক আধিপত্য, জয়জয়কার।
যারা বাংলা সিনেমাকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করত তারাই এখন বাংলা সিনেমার টিকেটের জন্য হলে ফোন দেয়। সিনেপ্লেক্সগুলোতে এমন অবস্থা আগে শুধুমাত্র হলিউড সিনেমার ক্ষেত্রেই দেখা যেত। দিন পাল্টেছে, বাংলা সিনেমার সুদিন আসছে।
দেশের বাইরে থেকেও আসতে থাকে ভালো খবর। আমেরিকার বক্স অফিস টপচার্টে ৩০ এর মধ্যে উঠে আসে হাওয়া। আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ভালো ব্যবসা করে পরাণ-হাওয়া। কলকাতায় মুক্তি পাওয়া হাওয়া নিয়ে চলছে রীতিমতো উন্মাদনা। ইংগিত দিচ্ছে বাংলাদেশের সিনেমার নতুন বাজারের।
দর্শকের এই জোয়ার, আলোচনা ও সমালোচনা সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রশিল্পে সুদিনের আভাস মিলেছে। যার কারণে নির্মাতা, প্রযোজক ও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সামনের দিনগুলোতে সিনেমায় কাজ করার প্রেরণা পাচ্ছেন। হল মালিকরাও আশা দেখছেন সিনেমার ব্যবসায়ে।
কন্টেন্ট ভালো হলে দর্শক হলে আসবেই। সে ক্ষেত্রে আমাদের যেটা করতে হবে সচেতনতা ও দর্শকদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে সিনেমা নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া শুধু ঈদকেন্দ্রিক সিনেমা নির্মাণ করলেও আমাদের চলবে না। কারণ বছরের অনেকটা সময় কোনো ফেস্টিভ্যাল থাকে না। সে সময়টিতে হলে দর্শক ধরে রাখাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ যদি আমরা জয় করতে পারি, তাহলে সিনেমা শিল্পে জোয়ার আসবে।
গল্প, গানে, নির্মাণে সিনেমাগুলো যে জোয়ার নিয়ে এসেছে তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক।
এ মুহূর্তের সংবাদ