চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আবার একটি হাতিকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। হত্যার পর ওই হাতির দাঁত এবং নখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে নিয়ে গেছে তারা। ধারণা করা হচ্ছে, দুই থেকে তিনদিন আগে হাতিটিকে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার জলদী রেঞ্জের পাইরাং বিটের আওতাধীন মনুমার ঝিরি এলাকায় গভীর বনের ভেতর হাতিটির মরদেহ পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘ধারণা করছি, ফাঁদ পেতে হাতিটিকে দুষ্কৃতকারীরা হত্যা করেছে। হাতিটির পিঠে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো ছুরির আঘাত রয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হাতিটিকে খুন করা হয়েছে। হাতিটির বয়স আনুমানিক ৭-৮ বছর হবে। হত্যার পর দাঁত ও নখ কেটে নিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে বাঁশখালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকেও তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে।’ জলদী রেঞ্জের রেঞ্জার শাহ আলম বলেন, হাতিটিকে দুই বা তিন দিন আগে হত্যা করা হতে পারে।
আইইউসিএনের ২০১৬ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, সে সময় বাংলাদেশে হাতি ছিল ২৬৮টি। স্থায়ীভাবে এ অঞ্চলের বাসিন্দা এমন হাতি ছাড়া পরিব্রাজক হাতির গড় সংখ্যা ছিল ৯৩। বন্দী দশায় আছে নিবন্ধিত এমন ৯৬টি হাতি ছিল সে সময়। বাংলাদেশের বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সাল থেকে গত ১৭ বছরে মানুষের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে ১১৮টি হাতি।
২০১৫ সাল থেকে বিগত ছয় বছরেই মারা গেছে ৬৯ টি হাতি। তবে দেশের প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি, ২০২০ ও ২০২১ সালে ২২টি ও ১৬টি হাতি মারা পড়েছে মানুষের হাতে।
বাংলাদেশ ও এশিয়ার দেশগুলোতে বাস করা হাতির নাম এশিয়ান হাতি, দেখতে কিছুটা ধূসর রঙা। আকারে তার আফ্রিকান আত্মীয়ের চেয়ে বেশ ছোট। বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, ঘাস, কলাগাছ, গাছের পাতা, ছাল-বাকল, ডালপালা খেয়ে বেঁচে থাকে। বসতি গড়ে তোলে আশেপাশে পানির উৎস আছে এমন কোনো জায়গায়। তৃণভূমি ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনই এর আবাসস্থল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাত্র তেরোটি দেশে বিপন্ন এ প্রাণীটির দেখা মেলে। এরমধ্যে একটি দেশ বাংলাদেশ।
১৯৮৬ সাল থেকেই বিপন্ন প্রাণী হিসেবে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) লাল তালিকাভুক্ত এশিয়ান হাতি। এ প্রাণীটির সংখ্যা অর্ধেকের মতো কমেছে গত ৭৫ বছরেই। এশিয়ার যে সব দেশে এ হাতির দেখা মেলে, এরমধ্যে সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থায় আছে বাংলাদেশে। বৈশ্বিকভাবে এটি আইইউসিএনের বিপন্ন তালিকায় থাকলেও, বাংলাদেশে এটি মহা-বিপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত।
এখন থেকে কঠোর ভূমিকা না নিলে অচিরেই বাংলাদেশ হাতিশূন্য হয়ে পড়বে সন্দেহ নেই।