ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন »
বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম
মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে অপরিসীম শুকরিয়া, নবী করিম (সা.)-এর দরবারে লাখো সালাম ও দরুদ, সমগ্র বিশ্বের অলিয়ে কেরামদের চরণে লাখো সালাম এবং সর্বোপরি আজকে যার স্মরণে কিছু লেখার প্রয়াস পাচ্ছি সে মহান অলিকুল শিরোমণি মুশকিল কোশা হাযত রাওয়া শেখ সৈয়দ হযরত শাহজাহান শাহ্ (রহ.)-এর প্রতি নিবেদন করছি লাখো সালাম ও অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।
একজন মহাসাধকের আবির্ভাব জগৎ ও জীবনকে আলোকিত করে তোলে। তেমনিভাবে হযরত শাহজাহান শাহ্ (রহ.)-এর আগমন আলোকিত করেছে বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি খ্যাত এই চট্টগ্রামকে। খ্রীষ্টিয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষার্ধে সুদূর ইয়েমেন (আরব) থেকে সর্বস্ব ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি প্রথমে লাহোর, পরে দিল্লি, গৌড় হয়ে জলপথে বাংলাদেশ তথা ইসলামাবাদ নামে অভিহিত চট্টগ্রামে আগমন করেছিলেন বলে জানা যায়। প্রথমে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও পরবর্তীতে হাটহাজারী উপজেলার ধলই গ্রামে আবির্ভূত অলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজাহান শাহ্ (রহ.)-এর পুণ্য ছোঁয়ায় সমগ্র ধলই এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চল এক বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ এলাকায় পরিগণিত হয়েছে। তিনি এ এলাকায় শতাব্দীর পর শতাব্দী কাল ধরে বিরাজমান ও বিকাশমান। তাঁর রওজা মোবারক ও দরবার জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল জাতির মিলনকেন্দ্র। জীবদ্দশায় যেমনটা ছিলেন তেমনি অন্তরালে চলে গেলেও তিনি মানবকল্যানে সর্বদা নিবেদিত। এখনো তাঁর রুহানী ফয়েজ-বরকতের মাধ্যমে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী মানুষ মহান আল্লাহতায়ালার করুণা লাভে ধন্য হচ্ছেন। পাঁচশত বছরেরও পূর্বে ফয়েজ-বরকতের যে ধারা সূচিত হয়েছিল, তা অনন্তকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
যুগে যুগে অনেক অলি-বুজুর্গ, শায়খ-সূফী বাইরে থেকে চট্টগ্রামে শুভাগমন করেছিলেন। চট্টগ্রামও জন্ম দিয়েছে অনেক অলি-বুজুর্গকে। চট্টগ্রাম নবীন প্রবীণ অসংখ্য সূফী দরবেশদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ধলই দরবার শরীফ অত্যন্ত প্রাচীন। কাছাকাছি অদূরে রয়েছে উপমহাদেশের স্বনামধন্য আধ্যাত্মিক কেন্দ্র মাইজভা-ার দরবার শরীফ। ধলই দরবার এবং মাইজভা-ার দরবার শরীফের মধ্যে একটা ব্যতিক্রমধর্মী আধ্যাত্মিক যোগসূত্র রয়েছে। উভয় দরবারের মহান অলিগণ আমাদের জন্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অমূল্য উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন তাঁদের মহান আদর্শ ও শিক্ষা। এ শিক্ষা মানবতাবাদ ও বিচারসাম্যের শিক্ষা, প্রভু মিলনে ধন্য হবার শিক্ষা, সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অবিচল থাকার শিক্ষা, সকল সৃষ্টিকে ভালবাসার শিক্ষা, স্বদেশ ও স্বদেশের মানুষকে ভালবাসার শিক্ষা এবং মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলীর কাঙ্খিত বিকাশের শিক্ষা।
আজ সারা বিশ্বের মানুষ শান্তির অণ্বেষায় পাগল। যুগের এ সন্ধিক্ষণে মানুষের আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজাহান শাহ্ (রহ.)-এর মত একজন মহান অলির সান্নিধ্য আজ বড়ই প্রয়োজন। তিনি আমাদের চোখের অন্তরালে চলে গেলেও আমরা তাঁর চোখের আন্তরালে চলে যাইনি। এমতাবস্তায় আমরা যদি তাঁর রেখে যাওয়া শাশ্বত জীবনাদর্শকে নিজেদের জীবনে প্রতিফলিত করতে পারি তবেই তাঁর সুদৃষ্টি লাভ করতে পারব এবং পরিণামে রাসূল (সা.) ও মহান আল্লাহতায়ালার রেজামন্দি হাসিল করতে সক্ষম হব। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে অলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজাহান শাহ্ (রহ.)-এর মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়ার তওফিক দিন। আমীন, ছুম্মা আমীন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক,
রসায়ন বিভাগ, চবি