নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি »
রাঙামাটি শহর থেকে বেশ দূরেই রূপনা কিংবা ঋতুপর্নার বাড়ি। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক ধরে ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়ির মেয়ে স্টাইলিশ ফুটবলার ঋতুপর্নার বাড়ি যাওয়টা অত সহজ নয়। প্রধান সড়কে ছেড়ে অনেকটা পথই পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে হয় এই দুরন্ত কিশোরীর গ্রামের বাড়িতে। চলতি পথের একটা বড় অংশেই ধানি জমি। সেই জমিনের আল ধরেই হেঁটে যেতে হয় তাদের। বহুদিন ধরে দুর্গম এই এলাকার মানুষের আবেদন নিবেদন ছিলো পথটি করে দেয়ার। নানা কারণেই হয়নি সড়কটি। কিন্তু বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দলের সাফ শিরোপা জয়ের পর প্রসারিত হলো সেই সড়কটি নির্মাণের কাজ। মঙ্গলবার ঋতুপর্নার বাড়িতে যাওয়ার পথেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে তাৎক্ষণিক সড়কটি নির্মাণের কাজ করার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। ডিসির নির্দেশে তৎপর ইউপি চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিনও জানান, দ্রুতই তিনি শুরু করবেন সড়কটির নির্মাণ কাজ।
যে প্রত্যাশায় পুরো পাড়ার মানুষ, দিনের পর দিন ঘুরেছেন এখানে সেখানে, সেই সড়কটি হঠাৎই নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পেয়ে আপ্লুত গ্রামের মানুষও।
ঋতুপর্নার মা বসুবতি চাকমা বললেন, আমার মেয়ের সাফল্যে গ্রামবাসী যদি সড়কটি পায়, এইটা তো খুবই আনন্দের। আমাদের সবার জন্য সড়কটি খুব দরকার। বর্ষা মৌসুমে খুব কষ্ট হয় আমাদের। সড়কটি হলে খুব উপকার হবে।’
আরেক ফুটবলার রূপনা চাকমাকে বাড়ি করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী- সেই খবর ইতোমধ্যেই সবার জানা। একই সাথে তার বাড়িতে যাওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির স্থলে নতুন সেতু নির্মাণের তোড়জোর শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে।
রাঙামাটির আরেক উপজেলা নানিয়ারচর এর ৫ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন এর ভূইয়াদম আদাম এলাকায় গাছামনি চাকমা ও কালা সোনা চাকমার মেয়ে রূপনা চাকমা। জন্মের পর বাবার মুখ দেখেনি। পরিবারে দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট রূপনা । আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় তাদের জরাজীর্ণ বাড়ি।
অত্যন্ত নাজুক এই সেতুটি নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক নানিয়ারচরের উপজেলা প্রশাসককে। সেই মোতাবেক শুরু হয়েছে কাজের প্রাক প্রস্তুতি।
বিষয়টি জেনে খুশি রূপনার মা কালাসোনা চাকমাও। তিনি বলছেন, ‘এই সেতুটি খুবই বিপজ্জনক। সেতুটি হলে এলাকার মানুষেরও অনেক উপকার হবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলছেন, ‘রূপনা ও ঋতুপর্ণা আমাদের এই রাঙামাটির গর্ব। তাদের এই অর্জনে সারাদেশের মানুষ গর্বিত। রূপনার পরিবারের একটা ঘর আর এলাকার ব্রিজ প্রয়োজন, আর ঋতুপর্ণার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা প্রয়োজন। আমি বিষয়গুলো দেখছি এবং যতটুকু করা সম্ভব তার সবই করব আমরা। ইতোমধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রূপনাকে ঘর করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তার ঘরে যাওয়ার পথের সেতুটি এবং ঋতুপর্নার বাসায় যাওয়ার সড়ক করে দিতে নির্দেশ বলেছি আমি। আশা করছি শীঘ্রই এসব কাজ শুরু হবে। মেয়ে দুটির জন্য কিছু করতে পারলে আমার নিজেরও ভালো লাগবে।’