চট্টগ্রাম মহানগরের লোকসংখ্যা বাড়ছে, বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, নগর সম্প্রসারিত হচ্ছে, যানবাহন বেড়েছে বহুগুণ কিন্তু নগরীর যানবাহন চলাচলে যে শৃঙ্খরা থাকার কথা তা কোথাও দৃশ্যমান নয়, বরং যানবাহানের চাপ, অনিয়ন্ত্রিত চলাচল, রুট পারমিট ছাড়া যানবাহ, মেয়াদউত্তীর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামিয়ে দেয়া, একই রুটে অধিক গাড়ি চলাচল, অযান্ত্রিক যানবাহনের দৌরাত্ম্য-এসব কারণে নগরীর সড়ক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। সড়কে শৃঙ্খলা আনায়ন করার প্রধান দায়িত্ব বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) পত্রিকান্তরে প্রকাশ, গত দুই বছরে সংস্থাটি মাত্র দুটি সভা করেছে অথচ নিয়ম অনুযায়ী ৪৫ দিন পরপর সংস্থাটির সভা করার কথা রয়েছে। নিয়মিত সভা না করা এবং যানবাহন নিয়ন্ত্রণে যে সকল জরুরি এবং সময়মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে করার কথা তা আর হয়ে উঠছে না। বিআরটিএ সিদ্ধান্ত নেয় ২০১৮ সালে এই মর্মে যে, ২০ বছর অতিবাহিত হওয়া টেম্পো, হিউম্যান হলার এবং ২৫ বছরের অতিবাহিত হওয়া বাস রাস্তায় চলাচল করতে পারবে না। অটো রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণে রংয়ের ব্যবহারের কথা বলা হয়। কিন্তু এসব নিয়মাবলী প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা তা দেখা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে বলা হয়েছে বিআরটিএ ফিটনেস সার্টিফিকেট দিলে তাদের করার কিছুই থাকে না। যে রুটে যাত্রী বেশি সে রুটে রুট পারমিটের বাইরেও গাড়ি চলাচল করছে। সড়কে এ ধরণের নৈরাজ্যমূলক অবস্থার কারণে যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি বাড়ছে। যানজট নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিসগামী, স্কুলÑকলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী তারা সঠিক সময়ে গন্তব্যে যেতে পারছেন না। তাদের কর্মঘণ্টার এভাবে অপচয় হচ্ছে। এটি মানুষের শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যে শহরটি দেশের অর্থনীতি বা ব্যবসা বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র, যেখানে আমরা দেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছি, সেখানে নগরীর সড়কে অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা তাদের হতাশ করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরীর পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে মালিকদের আগ্রহ কম। তা ছাড়া সড়ক ব্যবস্থাপনার সাথে যে সকল সংস্থা জড়িত তাদের কাজে কোনো সমন্বয় নেই। সড়ক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়–য়া এ প্রসঙ্গে বলেন, একই সড়কে বিভিন্ন গতির গাড়ি, এক রুটের গাড়ি অন্যরুটে চলাচল, ক্ষেত্র বিশেষে পারমিট ছাড়া গাড়ি চলাচল এসব বিষয় সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নের পথে প্রতিবন্ধক। সড়কে বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ ফুটপাতের অবৈধ দখল, রাস্তা দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকান চালু এবং অযান্ত্রিক যানবাহনের আধিক্য ইত্যাদি। আমরা মনে করি যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং তা সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় স্থাপন, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার নিয়মানুযায়ী বৈঠক করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ খুবই প্রয়োজন। অনিয়ন্ত্রিত এবং মেয়াদউত্তীর্ণ যানবাহন বায়ুদূষণ ঘটায় যা এ সময়ে খুবই মারাত্মক। যারা নগর জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, জীবনযাত্রা সচল রাখছে তাদের দুর্ভোগ আর ভোগান্তির মধ্যে নিক্ষেপ করা নগর উন্নয়ন পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।
মতামত সম্পাদকীয়