হুমাইরা তাজরিন »
যত দিন যাচ্ছে সবুজ শ্যামল গ্রাম বিলুপ্ত হয়ে যান্ত্রিক নগরে পরিণত হচ্ছে। পুরো দিনে নগরবাসীর প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়ার এতটুকু জায়গাও যেন অবশিষ্ট থাকছেনা। সম্প্রতি এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে বায়েজিদ থানাধীন ‘বায়েজিদ সবুজ উদ্যান’। নগরীতে সবুজে ঘেরা এই উদ্যানটিতে শান্তিপূর্ণ সময় কাটাতে ছুটে যাচ্ছেন নগরবাসী।
উদ্যানে ঘুরতে আসা মর্জিনা বেগম বলেন,‘ আমাদের নিজস্ব বাড়ি গ্রামে। আমরা সেখানে থেকে অভ্যস্ত। তবে বিয়ের পর স্বামীর চাকরির সুবাদে শহরে থাকছি। কিন্তু বহুতল ভবন আর যানবাহনের কোলাহল একেবারে ভালো লাগেনা। বিকেল হলে নিরিবিলিতে সময় কাটানোর জন্য প্রথম প্রথম বহু জায়গায় যেতাম। কিন্তু প্রায় সব জায়গা শহর থেকে দূরে অথবা শহরে থাকলেও গাড়ি ঘোড়ার শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। কিন্তু এই জায়গাটাতে শোরগোল একেবারে নেই। গাছপালা আছে। বাচ্চারা এসে খেলতে পারে। বড়রা হাঁটাহাঁটি করতে পারে। ভালো লাগে। জায়গাটা ছোট হলেও ছুটির দিন ছাড়া বিশেষ ভিড় বা ঝামেলা হয়না।’
বুধবার বিকেলে উদ্যানটি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বায়েজিদ থানার সেনানিবাস সড়কের অগ্রভাগেই উদ্যানটি অবস্থিত। উদ্যানের দুই মুখো গেটে একজন প্রহরী ছাড়াও শুভ্র বাগান বিলাস অন্যমাত্রা যোগ করেছে। গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই লাল ইটের ওয়াকওয়ের (৪ হাজার ফুট) সাথে সবুজ গাছপালা আর রঙ বেরঙের ফুল দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে। একটা ¯িœগ্ধ শান্তির আভা যেন ছুঁয়ে যায়। এ যেন দূষিত ও কোলাহলপূর্ণ যান্ত্রিক নগরের সম্পূর্ণ বিপরীত। কর্তৃপক্ষের মতে, এখানে ৪১ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এই গাছগুলোকে নিয়মিত পরিচর্যার জন্য পানি দিতে ৬০টি স্প্রিঙ্কলার বসানো হয়েছে। ওয়াকওয়ের পাশেসহ বাগানের ভিতরে বসানো হয়েছে ৪৬টি বেঞ্চ। যার মধ্যে ৩৯টি একক এবং ৭টি দ্বৈত।
উদ্যানের মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপন করা হয়েছে চমৎকার স্থাপত্য নকশা সমৃদ্ধ প্রায় ৩ হাজার বর্গফুটের জলাধার,যার উচ্চতা ২ থেকে ৩ ফুট। জলাধারে ফোয়ারার ব্যবস্থা থাকলেও চালু ছিলোনা সেটি। সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ছিল জলাধারের কিনারায় বসার জন্য নির্মাণ করা ২টি গ্যালারি। পুরো উদ্যানটি পরিচ্ছন্ন রাখতে স্থাপন করা হয়েছে ২০টি এস এস ডাস্টবিন। রয়েছে অভ্যন্তরীণ মাস্টার ড্রেন। মনোরম ল্যান্ডস্ক্যাপিং। সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যায় হাঁটা ও ব্যায়াম চর্চার জন্য রয়েছে বিভিন্ন সরঞ্জাম। কেবল বড়রা নয়, শিশুদের খেলাধুলার জন্য সরঞ্জামসহ উদ্যানটিতে রয়েছে সু-ব্যবস্থা। যেখানে রয়েছে দোলনা, সী স দোলনা এবং বহুমুখী খেলনার সরঞ্জাম। এইসব সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারবে অনুর্ধ্ব ১২ বছরের শিশুরা। জানা যায়, এই উদ্যানটি দর্শনার্থীদের জন্য ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত এবং বিকাল ৩টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে। তবে দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছুটির দিনগুলোতে বেশ ভিড় হয়। তখন এখানে পরিবেশটা আর নিরিবিলি থাকেনা।
পরিদর্শন করে দেখা যায় আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন নারী-পুরুষের পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো তালাবদ্ধ। তবে প্রহরীর বাধা স্বত্বেও ভবঘুরে শিশুরা উদ্যানের ভেতরে ঢুকে যায়। রক্ষণাবেক্ষণ অফিস ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করলেও উদ্যানে বখাটেদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়। তাদের কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে আসা অনেকেই বিব্রত হন। এছাড়া বৃষ্টি বা রোদ থেকে রক্ষা পেতে উদ্যানটিতে দর্শনার্থীদের জন্য কোনো ছাউনি নেই।
ঘুরতে আসা নগরবাসীর চাওয়া ছাউনির ব্যবস্থা, নিরাপত্তা জোরদার, শৌচাগারের সুবিধা সুলভ করার মতো মৌলিক বিষয়গুলো সমাধান করে এই উদ্যানটিকে সার্বিকভাবে স্বস্তিদায়ক করা হোক।
এ বিষয়ে নূরে জান্নাত নামের একজন বলেন, ‘বর্ষায় এখানে ছাউনি না থাকায় বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছিলো। উঠতি বয়সী ছেলেপেলেরা এখানে দলবেঁধে বসে থাকে, গান গায়। এগুলো কেউ দেখভাল করলে ভালো হতো।’