নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই বলেছেন, মহানগরের শিশুকিশোরদের খেলার মাঠে আনা না গেলে অপরাধপ্রবণতা বাড়বে এমন তাড়না ছিল প্রফেসর শায়েস্তা খানের।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে প্রফেসর শায়েস্তা খান স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভায় উপদেষ্টা বলেন, সরকার মেট্রোপলিটন ক্রীড়া সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন আইন, বিধি হবে। আশা করি বাস্তবায়নে পৌঁছাতে পারব।
তিনি বলেন, শায়েস্তা খান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, ছাত্রনেতা ছিলেন। জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। আমি শায়েস্তা খান স্যারের ভাইদের সঙ্গে বাসায় যেতাম। অপত্য স্নেহের বন্ধন ছিল। উনি টেবিলভর্তি খাবার রাখতেন। তাঁকে ভুলে যাওয়া সহজ না। এ ধরনের কালজয়ী মানুষ সমাজে সহজে উঠে আসবে না।
উপদেষ্টা আরো বলেন, দেশের অন্য কোনো জেলায়ও এ ধরনের কাজ কেউ করেনি। ৫২ বছর স্যারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে ছিলাম। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছাড়া দেওয়ার কিছু নেই।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরী ক্রীড়া সংস্থা করি। প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন রফিক চৌধুরী। আমি আর স্যার কত হাজার পৃষ্ঠা নষ্ট করেছি মহানগরী ক্রীড়া সংস্থার কনসেপ্ট নিয়ে। এমন শ্রদ্ধা করার মতো লোক সমাজে কম। ৪৩ বছর জুডিশিয়ারিতে আছি। আমরা পড়তে চাই না। আমার জীবনের অনেক মূল্যবান সময় ক্রীড়াঙ্গনে দিয়েছি। বয়সভিত্তিক অনেক খেলা আমরা চালু করেছি। মানুষের চরিত্র, সম্মান নির্ভর করে কাজের ওপর। আমি প্রফসর শায়েস্তা খান স্যারকে ভুলব না।
চট্টগ্রাম মহানগরী ক্রীড়া সংস্থা এ স্মরণসভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ।
সুপ্রভাত বাংলাদেশ সম্পাদক রুশো মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি চট্টগ্রাম শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী সৌমিত্র কুমার মুৎসুদ্দী, চসিকের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগরী ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক তৈয়বুর রহমান, ক্রীড়া সংগঠক হাফিজুর রহমান, সিজেকেএস ক্লাব সমিতির সভাপতি শাহীন আফতাবুর রেজা, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাহিদুল করিম কচি, ডেইলি পিপলস ভিউর সম্পাদক ওসমান গণি মনসুর, চট্টগ্রাম মহানগরী ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।
স্মরণসভায় সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, আমি সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্র। শায়েস্তা খান স্যারের আভিজাত্য, মেধা মনন এখনো স্পষ্ট। এখনো মনে হচ্ছে তিনি ক্লাসে হাঁটছেন। অনেক স্যার পড়িয়েছেন, কিন্তু স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছেন। উনার ব্যক্তিত্বের কারণে স্যারকে ভুলতে দেয়নি। আমার উন্নতি প্রমোশনে স্যার খুশি হতেন, অভিনন্দন জানাতেন।
প্রফেসর শায়েস্তা খানের ছেলে ডা. ইশতেয়াক আজিজ খান বলেন, আমার বাবা একজন শিক্ষানুরাগী, শিক্ষাবিদ একজন স্বপ্ন্রদ্রষ্টা। তিনি চট্টগ্রামে বয়সভিত্তিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চালু করেছিলেন। খেলাধুলার সুযোগ না পেয়ে শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বয়সভিত্তিক সুস্থ সবল জাতি গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই। আমার বাবা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। উনার নাম যেন মুছে না যায়।
প্রফেসর শায়েস্তা খানের মেয়ে ফারজানা জেসমিন খান বলেন, আব্বা খুব পান খেতে পছন্দ করতেন। সবসময় পানের সুগন্ধ ভেসে আসত। উনার কানের লতি ছিল বড় বড়। আব্বা মুভি লাভার ছিলেন। উনি সবসময় বলতেন, ফিরিয়ে দাও অরণ্য। উনি চাইতেন, ঘরের কাছে খেলার মাঠ গড়ে উঠুক।
বক্তারা বলেন, প্রফেসর শায়েস্তা খান ছিলেন সমাজের আলোকবর্তিকা।
প্রফেসর শায়েস্তা খান স্মারকগ্রন্থ ও ডকুমেন্টারি প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান অনুষ্ঠান সঞ্চালক সুপ্রভাত বাংলাদেশ সম্পাদক রুশো মাহমুদ।



















































