মহাকালের গর্ভে বিলীন হলো আরো একটি বছর। আজ সূর্যোদয়ের সাথে নব কিরণছটায় উদভাসিত হবে বছরের প্রথম প্রভাত। সেই আলোয় উজ্জ্বল হোক চারিদিক, সকল মানুষের জীবনে সুখÑসমৃদ্ধি আর স্বাচ্ছন্দ্য আসুক। বিগত বছরের বিপদসময়ের স্মৃতি অপসৃত হোক।
২০২০ বছরটি ছিলো দুঃসময় কেবল আমাদের দেশ নয় সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। কোভিডÑ১৯ মহামারি রূপে আবির্ভূত হয়ে সমগ্র বিশ্বকে ল-ভ- করে দিয়েছে। স্থবির হয়েছে জীবনÑঅর্থনীতি। বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ১৮ লাখ, আক্রান্ত সোয়া আট কোটি আর বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ৭ হাজার ৫শ’র বেশি, আক্রান্ত ৫ লাখেরও বেশি। করোনা যুদ্ধে সামনের সারিতে থাকা আমাদের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা জীবন দিয়ে আত্মত্যাগের সুমহান দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন। জাতির বরেণ্য সন্তান ড. আনিসুজ্জামান, ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, মূর্তজা বশীর, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, শিল্পী মনসুরুল করিম, কামাল লোহানীসহ অনেক সাহিত্যিক, সংগীত শিল্পী, সাংবাদিক, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্র শিল্পীসহ পেশাজীবী অঙ্গনের অনেককে হারিয়েছি, তাদের এই মৃত্যু জাতির মননশীলতা ও সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্রে এক বড়ো ক্ষতি। করোনায় হারিয়েছি অনেক রাজনৈতিক নেতাকে। এসব মৃত্যু বড়ো বেদনাদায়ক।
কোভিড মহামারিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষের জীবন জীবিকা, শিক্ষাব্যবস্থা, কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ। মার্চ থেকে প্রায় ৩ মাস লকডাউনে থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে জীবনÑজীবিকার সংগ্রাম শুরু হয়েছে। তিনি করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য পুনর্বাসন ও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রণোদনা প্যাকেজ পরিকল্পনার নির্দেশ দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে দেখানো হয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেক বড় ও ধনী দেশের তুলনায় অনেক ভালোÑএই পর্যবেক্ষণ বিশ্বব্যাংক এর। খাদ্য উৎপাদন ভাল হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ছুঁয়েছে, পোশাক রফতানিতেও উন্নতি ঘটেছে। করোনার মধ্যেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর সব স্প্যান বসেছে। এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। নতুন ধরণের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের খবরও আছে। এই অবস্থায় আমাদের স্বাস্থ্যসেবার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। করোনার সময় নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে, সামাজিক অপরাধও বেড়েছে। এটি সমাজের জন্য অশনিসংকেত।
বিগত বছরে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হয়নি বৃহৎ শক্তিগুলি কার্যকর ভূমিকা না নেওয়ার কারণে। সরকারকে এ বছরে কূটনৈতিক সক্রিয়তা দেখাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বাইডেনের বিজয় আমেরিকার গণতন্ত্রকে যেমন শক্তিশালী করবে, তেমনি একটি ভারসাম্যপূর্ণ বৈশ্বিক নীতি অনুসরণ করা হবে আশা করা যায়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমাদের জাতিকে দেশগড়ার নবতর প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করবে। ২০২১ তাই অধিক তাৎপর্যপূর্ণ জাতির কাছে। করোনার টিকা আবিষ্কার ও তার প্রাপ্তি বিশ্ববাসীকে আশান্বিত করেছে। তবে সকল রাষ্ট্রের সহজেও সুলভে টিকাপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। করোনার মহামারি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নানা ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে, সে সব মুছে ফেলে আমরা আশা আর নব উদ্যমে সামনের দিকে এগোবো। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আর মানবিক সমাজ গড়ার অঙ্গীকার হোক নতুন বর্ষে। সকলের জন্য ইংরেজি নববর্ষের শুভ কামনা।
মতামত সম্পাদকীয়