মো. মহসীন »
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারায় নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার সাড়ে ৩ বছর পর কতিপয় রাষ্ট্রদ্রোহী কর্তৃক জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করার পর দেশের সার্বিক রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে থাকে, এমনকি দেশের স্থিতিশীল অবস্থা ক্রমাগত নড়বড়ে হয়ে পড়ে, দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ফলে স্বাধীনতাত্তোর দেশের উন্নয়ন তৎপরতায় কোন অগ্রগতি রচিত হয়নি।
পরবর্তীতে একসময় যখন জাতির জনক কন্যা যখন দেশের ক্ষমতায় আসেন, তখন দেশকে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শের ভিত্তিতে লালন করে স্বপ্নের বাংলাদেশ জনগণের স্বার্থে গড়ে তোলার আপ্রাণ প্রচেষ্টায় নিজেকে যুক্ত করেন, কিন্তু কিছু সময় তিনি ক্ষমতার বাহিরে থাকার ফলে দেশ উন্নয়ন ধারা থেকে পিছিয়ে পড়ে।
দেশে তখন রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে পড়ে, এমনকি সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি ব্যাপকতা লাভ করে ফলশ্রুতিতে দেশের আর্থিক খাতে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
সময়ের আবর্তে আবার ২০০৯ সালে নির্বাচনে বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হলে দেশ ক্রমান্বয়ে উন্নয়ন কর্মধারায় ফিরে আসে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নের ব্যাপক ছোঁয়া লেগে যায়।
এভাবে দেশে উন্নয়ন কর্মকা-ের ফলে বঙ্গবন্ধুর কিছু স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের সূচনা হয়। দেশের প্রধান প্রধান নগরগুলো ধীরে উন্নয়নের ছোঁয়ায় অবয়ব পাল্টাতে থাকে। এভাবেই দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য মনোবল আর জোরালো প্রচেষ্টায় সেখানে সংস্কার সাধন করে উন্নয়নের জোয়ার বেগবান করে তোলে।
তিনি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেশে এমন এক নজির স্থাপন করলেন।
দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিশাল এক দূরত্বের অবসান হলো, দু’অঞ্চলের মানুষের মধ্যে প্রচুর ব্যবসায়িক সুযোগ সুবিধা এবং উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে যাওয়ার পথ অনেকাংশে সুগম হলো।
২০১২ সালের দিকে এই পদ্মা সেতু নির্মাণের সূচনালগ্নে পরাক্রমশালী বিশ্ব ব্যাংক তাদের অর্থায়ন করার বিষয় নিয়ে কিছু জটিল, নেতিবাচক মনোবৃত্তি পোষণ করে। এক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর পুরো নির্মাণ ব্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে বিরত হন।
দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রেখে দেশের অর্থায়নে এই পদ্মা সেতু গড়ে তোলার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাব পোষণ করেন,যার ফলে ২০১৫ সালে ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ব্রিজের সবগুলো স্প্যান বসানো শেষ হলো আর জাতির জীবনযাত্রায় এক অবিস্মরণীয় স্বর্ণালী অধ্যায়ের সূত্রপাত হলো। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতা ও প্রখর মেধার কারণে দেশবাসী আজ পদ্মা সেতুর বাস্তব অবয়ব দেখতে পেলো আর এরফলে দেশে একটা ইতিহাসের অধ্যায় রচিত হলো।এই সেতু আগামী ২০২১ সালে ডিসেম্বর মাসে চলাচলের জন্যে উন্মুক্ত করা হবে এবং ২০২৪ সালের শেষের দিকে ট্রেন চলাচলও শুরু হতে পারে।
দেশের অর্থায়নে এই বিশাল দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ায় সমগ্র বিশ্ববাসী আজ বিস্মিত এবং এই সেতুর রূপকার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অনবদ্য ভুমিকার কারণে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো। এই পদ্মা সেতু জাতির বহুকালের প্রত্যাশিত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন, যা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে উজ্জীবিত করে জাতির সফল অভিযাত্রায় অবদান রাখবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক