দেশবাসীর কাছে এ এক অবিস্মরণীয়, ঐতিহাসিক মুহূর্ত। পদ্মা সেতুর ৪১তম স্প্যানটি বসার সাথে সাথেই পদ্মার দু পাড়ের সংযোগ স্থাপিত হলো। এখন প্রমত্তা পদ্মার বুকে ছয় কিলোমিটারের দীর্ঘ সেতুটি দৃশ্যমান হলো। স্বপ্নের এই সেতুর অবকাঠামোর ওপর বসবে সড়ক স্ল্যাব তার নিচে বসবে রেল স্ল্যাব। এ কাজগুলি অনেক দূর এগিয়েছে। পদ্মাপারের উভয় তীরের মানুষের মধ্যে আনন্দের হিল্লোল, আগামী বছর বিজয় দিবসের আগেই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলবে। মানুষের এই মধুর অপেক্ষার প্রহর যাতে দীর্ঘতর না হয় সে জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাসময়ে সেতুর কাজ শেষ করার আহ্বান জানাই। করোনার ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যেও চীনের ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ও বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রকৌশলী, স্টাফ, সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন, এ জন্য আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই। গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি জাতীয় অধ্যাপক প্রকৌশলী জামিলুর রেজার অবদান যিনি এ সেতু প্রকল্পের অন্যতম প্রধান উপদেশক ছিলেন।
বাংলাদেশ যে অদম্য তার আর একটি দৃষ্টান্ত পদ্মা সেতু নির্মাণ। নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগেই অনেক চক্রান্ত জটিলতার মুখে পড়েছে পদ্মাসেতু প্রকল্প। বাংলাদেশ সরকার বার বার বিশ্বব্যাংকের তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগকে মিথ্যা ভিত্তিহীন বলেছে, দুদকও তদন্তে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি, এমন কি কানাডার আদালতেও এই বিষয়টি গড়িয়েছে। কানাডার আদালত বিশ্ব¦ব্যাংকের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। বিশ্বব্যাংক ও জাইকা পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ প্রত্যাহার করেছে। এ ধরনের প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সাহসী উচ্চারণে বললেন, দেশের অর্থেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। কারিগরি জটিলতা, নকশা পরিবর্তনের পরও অনেকটা প্রত্যাশিত সময়ে অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন করা হলো। আমরা আশা করবো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলবে আগামী বছর শেষ হওয়ার আগে। পদ্মা নদীর ওপর সড়ক ও রেল সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে সারা দেশের সরাসরি সংযোগ সাধিত হবে। এর ফলে এই এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও শিল্পজাত পণ্য সহজেই রাজধানী ও অন্যান্য জেলায় দ্রুত সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এতে উৎপাদকরা লাভবান হবেন। এই এলাকায় শিল্পকারখানা, অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিসিক শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে যা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দ্রুত শিল্পায়ন ঘটাবে।
বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে, পদ্মা রেল ও সড়ক সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে জিডিপি বাড়বে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
বর্তমান অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি শ্লথ হলেও বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলির কাজ চলছে। করোনার মধ্যে জীবন-জীবিকার সংগ্রাম অব্যাহত চলেছে। অনেক বড় অর্থনীতির দেশের তুলনায় প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য-এ জরিপ বিদেশি গণমাধ্যম ও সংস্থার। পদ্মা সেতু কেবল আমাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ নয় বরং আঞ্চলিক কানেকটিভিটির ক্ষেত্রেও বড়ো অবদান রাখবে।
মতামত সম্পাদকীয়