নিজস্ব প্রতিবেদক »
জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার একমাস পর এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক চট্টগ্রামে ফিরেছেন মঙ্গলবার। ফেরার আনন্দে আবেগাপ্লুত প্রতিটি পরিবার তাদের প্রিয়জনকে কাছে পেয়ে।
১২ মার্চ জলদস্যুর কবলে পড়েছিলেন এই নাবিকেরা। আর মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টায় কুতুবদিয়া থেকে লাইটার জাহাজ এমভি জাহান মনিযোগে তারা বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে পৌঁছান।
এমভি জাহান মনি বন্দরে পৌঁছানোর পর নাবিকদের স্বজনরা কেউ কেক, কেউবা ফুল নিয়ে বরণ করে নিয়েছেন নিজের প্রিয়জনকে। কোন কোন নাবিককে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
তাদের অর্ভ্যথনা জানাতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং সশরীরে উপস্থিত হন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, সচিব ওমর ফারুক, কেএসআরএম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সরওয়ার জাহান রোকন, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এ নাবিকদের জন্য আমরা চিন্তিত ছিলাম। এর আগেও এমন অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এতো অল্প সময়ে তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। বলা যায়, এ সরকার দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। তাই কারো কোনো ক্ষতি ছাড়াই অল্প সময়ে আমরা তাদের ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।’
মেয়র রেজাউল করিম বলেন, ‘দীর্ঘ দু’মাস মৃত্যুর সাথে মুখোমুখি হয়ে প্রতিটি মুহূর্তে যারা মনে করেছেন, এ মাত্র আমাদের জীবনপ্রদীপ শেষ হয়ে আসবে। তাদেরকে আমরা ফিরে পেয়েছি। স্বাভাবিকভাবে আমরা চট্টগ্রামবাসী আজকে আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত, আবেগাপ্লুত। সন্তান ফিরে আসলে মা-বাবা যেমন অশ্রু ধরে রাখতে পারে না, তেমনি আমরা যারা সমবেত হয়েছি তারাও আবেগ ধরে রাখতে পারিনি।’
এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান বলেন, ‘বীভৎস দিন থেকে আলোর দিনে ফিরেছি। দুঃসহ সেই স্মৃতির কথা আর মনে করতে চাই না। ট্রমা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আপনারা দোয়ার করবেন। দুই সন্তানকে কাছে পেলাম। বাসায় আরেক সন্তান কান্না করছে। তাঁর কাছে ফিরতে হবে দ্রুত।’
গত ১২ মার্চ ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাওয়ার সময় বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ২৩ নাবিকসহ সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়। জলদস্যুদের মুক্তিপণ দিয়ে ১৪ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহকে মুক্ত করা হয়।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জলদস্যুদের হাতে বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটল।
এর আগে ২০১০ সালে একই কোম্পানির এমভি জাহান মনি জাহাজও সোমালি জলদস্যুরা ছিনতাই করেছিল। ওইসময় জাহাজে ২৫ ক্রু এবং ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ মোট ২৬ ব্যক্তি ছিলেন। মুক্তিপণ দিয়ে ১০০ দিন পর তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কেএসআরএম গ্রুপের তথ্য মতে, উদ্ধার হয়েছেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।