সুপ্রভাত ডেস্ক »
দেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ সবসময় বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ বজায় রেখে আসছে। স্বাধীনতার পর থেকে ‘বাস্কেট কেস’ হিসেবে ভুলভাবে পরিচিত দেশটি তার বিস্ময়কর উত্থানে সবারই মনযোগ কেড়েছে। আর তাই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সক্ষমতা বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক সম্পর্কে কৌশলগত তথা স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কের ওপরই জোর দিচ্ছে। এতে অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে বেশ বড়সড় পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ’স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমরা মনে করি আমাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পাশাপাশি অর্থনৈতিক পরিপক্কতাও এসেছে। সব মিলিয়ে এমন একটি অবস্থান যে তৈরি হয়েছে তা আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
এখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে কৌশলগত বা স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক। এ সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা সহায়তার বিষয়াদি আছে এবং একইসঙ্গে অন্যান্য সহায়তা যেমন আইসিটি, সাইবার সিকিউরিটি, কাউন্টার টেররিজম, উগ্রবাদ মোকাবেলাও থাকতে পারে। এসবই স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কের উপাদান।’
আর এক্ষেত্রে, সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক করার ক্ষেত্রে বাংলোদেশের আগ্রহ রয়েছে বলে তিনি জানান।
‘আকর্ষণীয় বাংলাদেশ’
এখন অন্য দেশের কাছে বাংলাদেশ কতটা আকর্ষণীয় সেটার বর্ণনা করতে গিয়ে সচিব বলেন, ‘আমরা যখন ২০২০ সালের প্রথম দিকে ইতালি গেলাম তখন ওই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের কারণে ইতালির বড় বড় শিল্প মালিক, অ্যাসোসিয়েশনের নেতা, এমনকি প্রতিরক্ষা কোম্পানির জ্যেষ্ঠ্য কর্মকর্তারাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘সবার মাঝে একটি সাধারণ জিনিস দেখা যাচ্ছে যে, তারা বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দেখছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব। যার কারণে তারা পরের ধাপে যেতে চায়।’
মধ্যপ্রাচ্যের মনোভাব
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সাধারণত বাংলাদেশকে শ্রমিক পাঠানো দেশ হিসেবেই বিবেচনা করে। এখন তাদের এ ধারণা কিছুটা হলেও বদলেছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের একমাত্র বিবেচনার বিষয় ছিল মানুষ পাঠানো। কিন্তু তারাও এখন বাণিজ্য-বিনিয়োগ এমনকি কৌশলগত সংলাপ নিয়েও আলোচনা করছে।’
সম্প্রতি ওমানের সঙ্গে প্রথম ফরেন অফিস কনসালটেশনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমি অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছি। এর মধ্যে অভিবাসন নিয়ে আলাপ হয়েছে বলা যায় ১৫ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘ওই দেশের পররাষ্ট্র সচিব আমার সঙ্গে সম্মত হয়েছেন যে, দুই দেশের সম্পর্ক শুধু শ্রমবাজারভিত্তিক হওয়ার কোনও কারণ নেই। সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের একটি ভূমিকা রয়েছে এবং এখন বাংলাদেশকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে হবে।’
সবাই লাভ খোঁজে
প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থে চলে। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘সবাই লাভ খোঁজে এবং তাদের যদি আমরা এখানে লাভজনক একটি পরিস্থিতি তৈরি করে দিতে পারি, তবে তারা অবশ্যই আমাদের এখানে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর জন্য আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে মন-মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। প্রথাগত চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন