দুই মাস আগে স্কুলের বেঞ্চে বসা নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে সানোয়ারা বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রাহাত খানের কথা কাটাকাটি হয়। সেটি মীমাংসাও হয়ে যায়। স্কুলে এমন ঘটনা নতুন নয়। প্রতিদিন কোনো না কোনো স্কুলে এমন ঘটনা ঘটেই চলছে। কিন্তু রাহাতের জীবনে সে ঘটনাটি মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াল। এই ঘটনার জেরে গত মঙ্গলবার টিফিন ছুটির পর হামিদ চরে ক্রিকেট খেলার মাঠ আছে বলে তাকে নদীর তীরে নিয়ে যায় সহপাঠীরা। নিহতের পিতা অভিযোগ করেন, সেখানে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তারাই মেরে নদীতে ফেলে দেয়। বুধবার সকালে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন হামিদচরের কর্ণফুলী নদী থেকে রাহাত খানের (১২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে চান্দগাঁওয়ের পূর্ব ফরিদার পাড়া এলাকার মো. লিয়াকত আলীর তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে স্কুলের একজন শিক্ষক ফোন করে তাকে বলেন, হামিদচরের শাহাজী মাজার সড়কে স্কুলের এক ছাত্রের ব্যাগ, জুতা ও প্যান্ট পাওয়া গেছে। ব্যাগে থাকা বেতন রশিদ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে সহকর্মী ফোন করেছিলেন রাহাতের পরিবারে। ফোন করার পর রাহাতের পরিবারের লোকজন সেখানে গিয়ে জুতা, ব্যাগ নিয়ে আসেন।
স্কুল ব্যাগ পাওয়ার পর অনেক খোঁজাখুঁজির পরও রাহাতকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ স্কুলে থাকা সিসি ক্যামেরা চেক করে দেখে। তাতে দেখা গেছে, এক সহপাঠীর সঙ্গে রাহাত স্কুল থেকে বের হয়েছে। পরে পুলিশ ঐ সহপাঠীকে আটক করে। আটককৃত সহপাঠী আরো তিনজনের নাম পুলিশকে জানায়। তারা সকলেই স্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্র অর্থাৎ রাহাতের একই ক্লাসের।
পুলিশ জানায়, ওই তিন ছাত্রের নাম–ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের বাসায় গিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা রাহাতকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে এবং তাদের দেখানো স্থান কর্ণফুলী নদী থেকে রাহাতের লাশটি উদ্ধার করা হয়।
সামান্য কথা কাটাকাটির জের ধরে মাত্র ১২ বছর বয়সী কিশোরের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডটি মানুষকে বড় ধরনের নাড়া দিয়েছে। নিহতের মা-বাবাই শুধু নয় সবশ্রেণির মা-বাবাকেই শোকাহত করেছে ঘটনাটি। আসলে এ ঘটনাটি সমাজের ভয়াবহ এক অবক্ষয়ের চিত্র। সামাজিক মূল্যবোধের কী ধস হলে এই কোমলমতি শিশুরা ঘাতক হয়ে উঠতে পারে!
বর্তমানে সমাজে যে ধরনের নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড চলছে তা দেখতে দেখতে শিশুরা অজান্তেই সে নিষ্ঠুরতায় ঢুকে যাচ্ছে। নৃশংসতা দেখতে দেখতে নিজেরাই নৃশংস হয়ে উঠছে।
এটি বড় অশনি সংকেত। আমরা বড়রা যদি মানবিক ও সভা আচরণ না করি তাহলে আমাদের সন্তানদের কাছে আমরা কোনো মানবিক আচরণ আশা করতে পারি না। সমাজ ও রাষ্ট্রে যদি নিষ্ঠুরতা চলে তাহলে তা মানুষ বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের তা স্পর্শ করবেই।