আজ থেকে এনসিটি চালাবে চট্টগ্রাম ড্রাইডক

সুপ্রভাত ডেস্ক »

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড। এটি নৌবাহিনী পরিচালিত একটি সামরিক জাহাজ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান।

আজ সোমবার (৭ জুলাই) থেকে প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনাল পরিচালনা শুরু করবে। রোববার সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে বন্দরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় বিতর্কিত সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে আর চুক্তি করছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ।

যদিও এনসিটি থেকে সাইফ পাওয়ারটেককে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আগে চূড়ান্ত হয়েছিল। প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেই টার্মিনালটি পরিচালনা করবে। পরবর্তীতে সরকার নৌবাহিনীকে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্ব দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে আইনি কিছুটা জটিলতা থাকায় সরাসরি নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান ড্রাইডককে এনসিটির দায়িত্ব দেয় সরকার।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ড্রাইডকের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় অনুমোদন হয়েছে। সোমবার থেকে ছয় মাসের জন্য চুক্তি হবে। এদিন সাইফ পাওয়ার টেক আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে।

এরআগে, এনসিটি বিদেশিদের হাতে না দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন পক্ষ সরব হয়। তবে তাদের দাবির আড়ালে সাইফ পাওয়ারটেককে রক্ষা করতেই এই আন্দোলন চালিয়েছে বলে অভিযোগ করে অনেকেই। আন্দোলনের ডামাডোলের মধ্যেই নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ফাঁস করেন। এতে টাকা ঢেলে বন্দর অচলের জন্য সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন নির্দেশনা দেন বলে অভিযোগ করেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত।

জানা যায়, সাইফ পাওয়ারটেক ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে বন্দরের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের মাধ্যমে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলটির শীর্ষ নেতাদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংসহ নানা খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সরকারের উচ্চ মহলের সিদ্ধান্তে বন্দর কর্তৃপক্ষ টেন্ডার না দিয়েই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বছরের পর বছর চুক্তি নবায়ন করে। আবার কোনো সময় টেন্ডার হলেও নীতিমালায় এমন সব শর্ত দেওয়া হয় যাতে সাইফ পাওয়ার টেক ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক সংসদ সদস্য  এম এ লতিফ, নূর-ই-আলম চৌধুরী, সামশুল হক চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ. জ. ম নাছির উদ্দীনসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের। এই ঘনিষ্ঠতাই ছিল তার প্রধান সম্পদ। এর মাধ্যমে তিনি কেবল বন্দর নয়, দেশের আরও অনেক বড় সরকারি প্রকল্পে প্রবেশাধিকার পান।

সাইফ পাওয়ারটেকের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে দুবাইভিত্তিক সাফিন ফিডার কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতার ঘোষণা দিয়ে শেয়ারবাজারে শেয়ারদর বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে খোলা প্রতিষ্ঠান ‘সাইফ মেরিটাইম এলএলসির’-অর্থ বাংলাদেশ থেকে কীভাবে পাচার হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সাইফ পাওয়ারটেকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, রাজস্ব ফাঁকি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সরকারি কাজ বাগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।