সোমবার চালু হচ্ছে গণপরিবহন, ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিক্রিয়া

সাধারণ ছুটি শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। নগরীতে শুরু হচ্ছে কর্মচাঞ্চল্য। এখন থেকেই চলতে শুরু করেছে কিছু গণপরিবহন। শনিবার দেওয়ানহাট এলাকার ছবি- রনী দে

 

বাস ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ বিআরটিএর #
প্রত্যাহার দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও ক্যাবের #

নিজস্ব প্রতিবেদক :
মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর ১ জুন সোমবার থেকে চালু হচ্ছে গণপরিবহন। ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত আসন ফাঁকা রেখে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাসে দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী না নেয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সড়ক পরিবহন চালুর বিষয়ে শুক্রবার (২৯ মে) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতা ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাস ভাড়া ৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন পরিবহন মালিকরা। বিআরটিএর কার্যালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভার এক পর্যায়ে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এদিকে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই গণপরিবহন চালুর সরকারি সিদ্ধান্তের পর বাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রতিটি বাসে ৫০ ভাগ সিট খালি থাকবে বলে মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ৪০ সিটের বাসে ২০ জন যাত্রী থাকলে খালি সিটের ভাড়া যাত্রীদেরই দিতে হবে। সেই হিসেবে ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়েছে সে সুপারিশ। শিগগিরই সেটি সিদ্ধান্ত আকারে আসবে।
এদিকে, মহাসংকটকালে গণপরিবহনের ৮০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংকটকালীন সময়ে বাস ভাড়া বৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্তে উপনীত না হতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বিআরটিএ’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-চট্টগ্রাম।
শনিবার (৩০ মে) সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পৃথক বিবৃতি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘করোনা মহামারির এই সংকটকালে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অজুহাতে নিধারুণ আর্থিক সংকটে পতিত দেশের অসহায় জনগণের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া গণপরিবহনের এক লাফে ৮০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, সড়কে চাঁদাবাজির বন্ধের পদক্ষেপ না নিয়ে, জ্বালানি তেলের মূল্য না কমিয়ে, পরিবহনের চালক-শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ সম্পর্কিত কোনপ্রকার প্রশিক্ষণ না দিয়ে, গণপরিবহন চালুর মধ্যদিয়ে জনগণকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে সড়কে নারকীয় পরিবেশের কোন প্রকার উন্নতি ঘটানো ব্যতি রেখে উল্টো গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে সরকার সড়কে নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে।
বিবৃতিতে তিনি অনতিবিলম্বে গণপরিবহনের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যমান ভাড়ায় জনসাধারণকে যাতায়াতের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেন, করোনা মহামারি ও লকডাউন চলাকালে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা থমকে আছে। এ অবস্থায় বাস ভাড়া বৃদ্ধি করা হলে সেটি জনগণের জীবনযাত্রায় নতুন ভোগান্তি যোগ করবে। এই জরুরি সংকটকালীন সময়ে বাস ভাড়া বৃদ্ধির মতো হটকারী সিদ্ধান্তে উপনীত না হতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ক্যাব, চট্টগ্রাম।
বিবৃতিতে নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে কোন সংকট ও অজুহাতে গণপরিবহনগুলি বর্ধিত ভাড়া আদায় করলেও স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া কমানোর কোন নজির নেই। তাই অর্ধেক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহনগুলো বিদ্যমান ভাড়া আদায় করে পরিবহন সেবা চালু করে মালিক-শ্রমিকদের আয় ও কর্মসংস্থান পুনরায় শুরু করতে পারেন।
ক্যাবের পক্ষে বিবৃতিদাতারা হলেন-ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান।