সোনাদিয়ায় গাছ কেটে মাছ চাষ, নির্বিকার প্রশাসন

বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ছোট্ট দ্বীপ সোনাদিয়া। লাল কাঁকড়া, কাছিম ও বিরল পাখির কারণে সুপরিচিত এই দ্বীপ। সেখানে এখন সমানে গাছ কাটা হচ্ছে। খননযন্ত্র দিয়ে ঘের তৈরি করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য চিংড়ি চাষ।
সোনাদিয়া দ্বীপটিকে ২০০৬ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। মানে হলো, সেখানকার মাটি, পানি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো পরিবর্তন করা যাবে না।
দ্বীপের বাসিন্দা ও পরিবেশ রক্ষায় আন্দোলনকারীরা বলছেন, দ্বীপটিতে গত চার মাসে নতুন করে অন্তত ২ হাজার একর প্যারাবন দখল করে ৩৭টির বেশি চিংড়িঘের তৈরি করা হয়েছে। কেটে ফেলা হয়েছে ছোট ও বড় ২২ লাখের বেশি বাইন, কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এর সঙ্গে জড়িত সরকারি দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এবং স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। চিংড়িঘেরগুলো দেশীয় বন্দুকসহ পাহারা দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সোনাদিয়ায় তৈরি করা ঘেরে এ মাসে পোনা ছাড়ার পর নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ শুরু হবে চিংড়ি ধরা ও বিক্রি। দ্বীপের ২ হাজার একরের বেশি জমিতে তৈরি করা ঘেরে অন্তত ২৫০ কোটি টাকার চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব। অভিযোগ রয়েছে, এই বড় আয়ের ভাগ অনেকেই পায়।
এদিকে সোনাদিয়া দ্বীপে চিংড়িঘের তৈরি ও প্যারাবন দখল নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। গত ২ মার্চ স্থানীয় নুরুল আজিম মিয়া বাহিনীর সঙ্গে বড় মহেশখালীর জাগিরাঘোনার জাহাঙ্গীর আলম বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষে ২ জন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ১০ জন। এই ঘটনায় ২২ জনের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় দুটি হত্যা মামলা হয়েছে।
পরিবেশ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় জমি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করা যায় না। সোনাদিয়া দ্বীপকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন ঘোষণা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। দ্বীপটি রক্ষায় তাদের কোনো দায়িত্ব চোখে পড়ে না।
সোনাদিয়ার প্যারাবন রক্ষার দাবিতে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে। সোনাদিয়ার প্যারাবন উজাড় করে চিংড়িঘের তৈরি করছেন রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা। তাঁরাই বন উজাড় করছেন। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার। এমন কি বন ধ্বংসের প্রতিবাদ জানালে মারধরের শিকার হতে হচ্ছে।
দোষীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। কোনোরকম ছাড় দেয়া যাবে না। এধরনের ঘটনা বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।