দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার »
কক্সবাজার শহরের ভেতরেই চলছে বীরদর্পে পাহাড় কাটা। শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাদশাঘোনায় যেন পাহাড় কাটার মহোৎসব। পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পাহাড়কাটার স্থান পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ নাজমুল হুদার নেতৃত্বে একটি টিম। এটি শহরের বাদশাঘোনায় বিভিন্ন স্পট পরিদর্শন করে।
স্থানীয়রা জানায়, কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর অভিযান ঝিমিয়ে পড়ায় পাহাড়কাটার প্রতিযোগিতা চলছে রীতিমতো। এরই ফলে গত কয়েক মাসে ১০টিরও বেশি পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে ওই এলাকার ভূমিদস্যুরা। আর লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে এসব পাহাড় বিক্রি করে আসছে তারা। এর পেছনে জড়িত রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা প্রভাবশালী মহলের আশ্রয় প্রশয়ে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোন কিছু বলা বা করার সাহস করছে না কেউ। এসব সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে রয়েছে বেশ ক’জন। তারা এলাকায় মাঝি নামে পরিচিত। এসব মাঝি এলাকায় চিহ্নিত হলেও কেউ ভয়ে মুখ খুলেন না তাদের বিরুদ্ধে। তাদের নেতৃত্বে চলছে ৭০/৮০ জন শ্রমিক নিয়ে প্রতিদিন প্রতিযোগিতা দিয়ে পাহাড় কাটা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের পাশে অর্ধডজন পাহাড় নিধনে ব্যস্ত পাহাড়খেকোরা। তারা পাহাড়কে ন্যাড়া করে নির্মাণ করছে বসতি। কেউ নানা কৌশলে ঘরের ভেতরে ভেতরে কাটছে পাহাড়। কিছু উঁচু পাহাড়ের অর্ধেকেরও বেশি খাড়াভাবে কেটে সমান করা হয়েছে। আর এসব পাহাড় কর্তনকারীদের সঙ্গে কথা বলতেই অনেকে বলে উঠে আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর হতে অনুমতি নিয়েছি। কেউ বলছেন লাখ লাখ টাকায় স্ট্যাম্পমূলে বৈধভাবে পাহাড় কিনছেন। আবার কেউ বলছেন, মসজিদের মাঠ ভরাট করার জন্য এসব পাহাড় কাটা হচ্ছে।
এদিকে পাহাড়কাটার প্রতিকার চেয়ে বাদশাঘোনা এলাকার জাহাঙ্গীর মেহেদী পিয়ারুর স্ত্রী খালেদা বেগম, মো. সিরাজের ছেলে মুন্সি শাহাদত হোসেন, আবুল কালামের স্ত্রী মর্জিনা বেগম, মো.করিমের স্ত্রী বেবি আকতার, দুলা মিয়ার ছেলে মো. করিম, মৃত হাজী মুফিজুর রহমানের ছেলে রফিক উদ্দিন, মৃত আবদুস সুবহানের ছেলে আলমগীর জনৈক পাহাড় কর্তনকারী আবছারের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষে কয়েকজন বাদি হয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এদের অনেকের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট আদালতে ২/৪টি করে মামলা থাকলেও তারা এসবকে তোয়াক্কা না করে পাহাড় কাটা অব্যাহত রাখছে বলে জানান এলাকাবাসী।
অভিযোগে জানা যায়, বাদশাঘোনা এলাকায় স্ট্যাম্পমূলে পাহাড় ক্রয় কিংবা পাহাড় দখল করে বনে গেছেন অনেকে জমির মালিকানা। মালিক বনে যাওয়ার পর পাহাড় কেটে করা হয় বসতি। এসব পাহাড়কাটার পেছনে আরো জড়িত রয়েছে জনৈক রশিদ, বাচ্চু, সালমা, মরজিনা, আবদুল্লাহ, মনুসহ বেশ কয়েকজন। দীর্ঘদিন পাহাড়কাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকি না থাকায় একেকটি পাহাড়ের অর্ধেকেরও বেশি খাড়াভাবে কেটে ফেলা হয়েছে। এভাবেই হরেক রকমের কায়দায় চলছে পাহাড় ধ্বংস। বিগত দুইমাসে প্রতিনিয়ত পরিবেশের ওপর এই ভয়াবহ আগ্রাসন চললেও নেই কারও মাথাব্যথা। পরিবেশ সুরক্ষায় পাহাড়কাটায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শহরের ভেতরেই এভাবে আইনের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে পাহাড়কাটা চলছে। গত ৪ মাসের ব্যবধানে ৬টি পাহাড় এভাবেই কেটে সাবাড় করা হয়েছে। সৈকত শহরে পাহাড় যেন নেই হয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন এনভায়রমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়কাটা নিত্য ঘটনায় রূপ নিয়েছে। অবাধে পাহাড় কাটার কারণে ঝুঁকিতে পড়ছে পরিবেশ। কক্সবাজারে অন্তত ২০০ স্পটে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা চলছে। কিন্তু পাহাড়কাটা রোধে সে তুলনায় জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের কোনো ভূমিকা নেই। পাহাড়কাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানা নিশ্চিত করতে হবে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়ে শহরের বাদশাঘোনা এলাকার কয়েকটি পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সকল ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।