দেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বুকে রয়েছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার অধীন এই দ্বীপ জনপদ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে যত পরিচিত, ততই যেন অপরিচিত স্থানীয় প্রশাসনের কাছে! বিশ্বের অন্য কোন দেশে এ ধরণের মনোরম দ্বীপ থাকলে সেটি হয়ে উঠতো নয়নাভিরাম। প্রকৃতির ভূষণটিকে তারা আরও যতেœ মমতায় সৌন্দর্যের চূড়ায় নিয়ে যেতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেন্টমার্টিনবাসীর! এত অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধারটির প্রতি, এর অধিবাসীদের জীবনযাপনের প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি নেই। আমাদের টেকনাফ সংবাদদাতার পাঠানো প্রতিবেদনে এই দ্বীপের অধিবাসীদের সমস্যার সাতকাহন জানা গেল।
আমাদের সংবাদদাতা তার প্রতিবেদনে যোগাযোগ সমস্যাকে অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন। উপজেলা কিংবা জেলা সদরে যেতে দীর্ঘসময় লেগে যায়। জাহাজ ভাড়া, স্পিডবোটে বড় অংকের টাকা লাগে। আবহাওয়া বৈরী থাকলে যাওয়া আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। দ্বীপটিতে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও কোন এমবিবিএস চিকিৎসক নেই। অসুখে-বিসুখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে দ্বীপবাসীদের ভোগান্তি অবর্ণনীয় হয়। পর্যটকদের জন্য জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে তার প্রাপ্যতা সহজ নয়। সৌর বিদ্যুৎ আছে তবে তা স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য সুলভ নয়। সরকারের উচিত সাশ্রয়ী মূল্যে স্থানীয়দের বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া। দ্বীপের অস্থায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ১৮ বছর ধরে বিকল। এটি সারানোর কোন উদ্যোগ নেই। ৯ হাজার দ্বীপবাসীর জন্য রয়েছে একটি মাত্র প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়, শিক্ষার্থী ৫০২। শিক্ষক মাত্র দুইজন। দ্বীপটিতে আরো কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। দেশে শিক্ষার নানামুখি কার্যক্রম চলছে অথচ দ্বীপবাসী তা থেকে বঞ্চিত। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা এবং মানুষের আর্থিক লেনদেন মেটাতে ব্যাংকিং সেবা অপরিহার্য হলেও দ্বীপটিতে কোন ব্যাংকের শাখা নেই। এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ শঙ্কা নিয়ে আসে দ্বীপবাসীর জন্য। এখন আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিরূপতার কারণে প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ঘটে যা দ্বীপবাসীদের জন্য অসহায় করে তোলে। আমাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দ্বীপটি ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে। উপকূলীয় টেকসই বাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ জরুরি। আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, স্থানীয় ‘পেটোয়া’ শ্রেণির লোকজনের দৌরাত্মে দ্বীপবাসীর জীবন বিষময় হয়ে উঠেছে। উপজেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। পরিবেশের সুরক্ষার জন্য রড সিমেন্টসহ আধুনিক নির্মাণসামগ্রী নেওয়ার অনুমতি না থাকলেও প্রভাবশালীরা রড সিমেন্টের বাড়ি করছেন, কীভাবে তা সম্ভব!
টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দ্বীপবাসীর নানা সমস্যার কথা স্বীকারও করেছেন। দেশের সর্বত্র উন্নয়নের চিত্র দেখা গেলেও এই দ্বীপটির অধিবাসীদের সমস্যা সংকট মোচনে তেমন প্রশাসনিক তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। যে দ্বীপটি প্রকৃতিগতভাবেই সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে, তার দিকে আমাদের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
মতামত সম্পাদকীয়