কালুরঘাটে রেলমন্ত্রী
আগামী বছর নতুন সেতুর কাজ শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
৯৩ বছরের পুরানো কালুরঘাট সেতুর বড় ধরনের সংস্কারকাজ করছে রেলওয়ে। এ কাজ শেষে সেতুর উপর ১৫ টন মিটারগেজ ইঞ্জিনের ট্রেন আগামী ৩০ বছর ঝুঁকিমুক্তভাবেই চলতে পারবে বলে জানান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শনে এসে কালুরঘাট সেতু এলাকায় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘কালুরঘাট সেতু অনেক পুরোনো। এই সেতু অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাই এ সেতুর সক্ষমতা বাড়াতে আমরা মেরামত প্রকল্প গ্রহণ করেছি। কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। আমাদের যে ইঞ্জিন ছিলো সেটি ১২ টনের। মেরামত কাজ শেষে সেতুর ওপর ১৫ টন মিটারগেজ ইঞ্জিনের ট্রেন আগামী ৩০ বছর ঝুঁকিমুক্তভাবেই চলতে পারবে। ২ নভেম্বর আমরা এখানে আসব এবং ট্রায়াল রান করব। প্রধানমন্ত্রী ১২ নভেম্বর উদ্বোধনের পূর্বেই এ রেললাইনটি ভালোভাবে তৈরি হয়েছে কিনা সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হতে চাই।’
সংস্কারকাজ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই এই ব্রিজের কাজ শেষ হবে। তবে ছোটখাটো কিছু কাজ থাকতে পারে। একই ব্রিজ দিয়ে ট্রেন যায়, যানবাহন চলাচল করে, মানুষও চলাচল করে। সেই পথচারীদের জন্য আমরা আলাদা করে একটা লেন করে দিয়েছি। মূল ব্রিজের ভিতরে আসতে হবে না। এটি আগে ছিল না। আমরা আরো ৬ ফিট ওয়াকওয়ে করে দিয়েছি। এটা নতুন সংযোজন। আগে মূল ব্রিজের সংস্কারকাজ শেষ হবে। এরপর ওয়াকওয়ে’র কাজ শুরু হবে। সেটা চালু হতে আরও ২-৩ মাস লাগতে পারে।’
নতুন সেতু নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ব্রিজটি বাদ দিয়ে নতুন একটি ব্রিজ কালুরঘাটে হবে। যেটি এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। আমরা আশা করছি, আগামী বছর এ নতুন সেতুর আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। ডাবল লেন মিটারগেজ এবং ফোর লেইনের সড়ক থাকবে একই ব্রিজের ওপর। কাজেই সেটি না হওয়া পর্যন্ত এই ব্রিজটি যেন আমরা ব্যবহার করতে পারি, সেভাবেই এটি তৈরি করা হচ্ছে।’
রেল যোগাযোগে ব্রডগেজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ব্রডগেজের ট্রেন এখন চালাতে পারছি না। ধীরে ধীরে এগুলোকে ব্রডগেজে রূপান্তর করব। আমরা খুব শিগগির চালাতে পারব না। কারণ আমাদের মূল ফোকাসটা হচ্ছে ঢাকার সঙ্গে। ঢাকার সঙ্গে যদি যাই, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত আমরা ডুয়েল গেজ করেছি। এদিকে আবার দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়েলগেজ করেছি। ভবিষ্যতে দোহাজারী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ করব। এরপর চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ করা হবে। ওইদিকে আখাউড়া থেকে টঙ্গী পর্যন্ত আমরা ডুয়েলগেজ করব।’
কক্সবাজার রেলরুট উদ্বোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ট্রেন লাইন নির্মাণে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। করোনার সময় কাজে ব্যাহত হয়েছে। সর্বশেষ বন্যার সময়ও রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরও আমরা কাজ প্রায় শেষ করে এনেছি। ২ নভেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে এই রুটে পূর্ণাঙ্গ একটি ট্রেন চালানো হবে। ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে রেললাইনের উদ্বোধন করবেন। মানুষ বিমানে-সড়ক পথে কক্সবাজার যায়। মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ট্রেনে করে কক্সবাজার যাবে।’
রেলমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সারাদেশের মানুষের এই রেলপথ নিয়ে আগ্রহ, ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা সবসময় সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আরামদায়ক। এজন্য এই প্রকল্প। আশা করি যাত্রীরা উপভোগ করবে। এই রেলপথ ধরে মাতারবাড়িতে যে ডিপ সি পোর্ট (গভীর সমুদ্রবন্দর) করছি, তার সাথেও ভবিষ্যতে যুক্ত করব। কাজেই বহুবিধ ব্যবহারের জন্য এটা করা হচ্ছে।’
কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর রেলসেতুর সংস্কারকাজ পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ‘দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে দোহাজারী এলাকায় যান। এসময় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা এবং সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্তসহ রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।