সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »
কাতার বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে মঙ্গলবার রাতে লুসাইল স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচ চলাকালীন সময়েই ছবিটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যা ছিল ১০ বছর আগে তোলা জুলিয়ান আলভারেজের সঙ্গে লিওনেল মেসির একটি ছবি।
দু’জনের গায়েই জাতীয় দলের জার্সি। একদৃষ্টে দু’জনেই চেয়ে আছেন ক্যামেরার প্রতি। এই ছবি আর মঙ্গলবার রাতে মেসির সঙ্গে আলভারেজের নানা মুহূর্তের ছবি দেখার যে কারো মনে হবে, ভাগ্যের কী লীলা! মূলত গত মে মাসে কোপা লিবার্তাদোরেসে এক ম্যাচে ৬ গোল করে আলোচনায় আসেন এই ফরোয়ার্ড। তার আগেই জানুয়ারিতে আলভারেজকে কেনা নিশ্চিত করেছিল ম্যানচেস্টার সিটি। বিশ্বকাপের আগে সিটির হয়ে এ মৌসুমে ২০ ম্যাচে এরই মধ্যে করেছেন ৭ গোল।
আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক দল পেরিয়ে জাতীয় দলের হয়ে তার অভিষেক ঘটে গত জুনে, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চিলির বিরুদ্ধে ম্যাচে। তবে আলভারেজ পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছেন কাতারে ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপেই। আর্জেন্টিনার ফাইনালে ওঠার পথে করেছেন ৪ গোল। এর মধ্যে সেমিফাইনালে করেন ২ গোল। তার সতীর্থ মেসির গোলসংখ্যা ৫টি। বলা যায় আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠেছে মেসি-আলভারেজের যুগলবন্দীতে।
এখন ভেবে দেখুন তো, ১০ বছর আগের সেই ছবির কথা। যখন ¯্রফে একজন ভক্ত হিসেবে মেসির সঙ্গে ছবিটা তুলেছিলেন ১২ বছর বয়সী আলভারেজ। সত্যি, স্বপ্ন মানুষকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে! আর এই স্বপ্নটাই দেখেছেন আলভারেজ। ২০০০ সালে জন্ম নেয়া এই ফরোয়ার্ড ১৪ বছর বয়সে স্থানীয় ক্লাব আতলেতিকো কালচিনের বয়সভিত্তিক দলে যোগ দেন। এর দুই বছর পর নাম লেখান রিভার প্লেটে। ইতালিয়ান সংবাকর্মী ফ্যাব্রিজিও রোমানো তার টুইটে জানিয়েছেন, মেসির সঙ্গে এই ছবিটি ১০ বছর আগে তুলেছিলেন আলভারেজ। তখন আলভারেজের বয়স ১২ বছর। একজন ভক্ত হিসেবে ছবিটি তুলেছিলেন তিনি। আলভারেজ তখনো কোনো ক্লাবের বয়সভিত্তিক দলে যোগ দেননি। তবে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তখন থেকে আলভারেজ নাকি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, বিশ্বকাপে মেসির সঙ্গে খেলবেন। ম্যানচেস্টার সিটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এ নিয়ে আলভারেজের বক্তব্যও আছে। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড এর আগে বলেছিলেন, ‘শৈশব থেকেই মেসি আমার আদর্শ। সে আমার পরিবারেরও আদর্শ। ভাইয়ের আদর্শ। তাই মেসি আমার কাছে নায়ক। শৈশব থেকেই স্বপ্ন দেখেছি জাতীয় দলে মেসির সঙ্গে খেলব।’
এ ছাড়াও টুইটারে ছড়িয়ে পড়া আলভারেজের শৈশবের একটি ভিডিও দেখেও বোঝা যায়, মেসিকে তিনি কতটা পছন্দ করেন। তার স্বপ্ন কি জানতে চাওয়া হলে আলভারেজ উত্তর দেন, ‘বিশ্বকাপে খেলা।’ আদর্শ কে- জানতে চাওয়া হলে এক কথায় বলেন, ‘মেসি।’ ভাগ্যের কী লীলা! সেই আলভারেজই এখন মেসির সতীর্থ। শুধু সতীর্থ বললে ভুল হবে, সেমিফাইনালে জোড়া গোল করা আলভারেজকে ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’ খেলোয়াড়ও বলেছেন মেসি। নিজে ম্যাচসেরা হলেও পুরস্কারটা আলভারেজের প্রাপ্য বলেই মনে করেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। খবর ডেইলি বাংলাদেশ’র। ম্যাচে মেসি পেনাল্টি থেকে যে গোলটি করেন, সেটি এনে দিয়েছেন আলভারেজ। ক্রোয়েশিয়ার বক্সে ফাউলের শিকার হন সিটির এই ২২ বছর বয়সী তারকা।
পরে ৬৯ মিনিটে মেসির পাস থেকে গোল করেন আলভারেজ। আলভারেজ এটাই তো চেয়েছিলেন! মেসির পাশে খেলবেন, গোল করবেন, করাবেন একেঅপরকে দিয়ে। ফাইনালে ওঠার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিশ্চয়ই এই ছবিতে চোখ পড়েছে তার। তখন আলভারেজের কী মনে হয়েছে? স্বপ্ন ও পরিশ্রম মানুষকে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে? তাছাড়া আর কী!