নিজস্ব প্রতিবেদক »
মাথায় উটের লোমের তৈরি উঁচু টুপি, পরনে ধপধপে সাদা আলখেল্লা। কেউ মাথা নত, কেউ দুহাত উচু করে সাধনায় রত অবস্থায় ফ্রেমে বন্দি হয়েছে। প্রায় দেড় ডজন ছবি। উপচেপড়া ভিড় সেখানে। ছবিগুলোর অর্থ বোধগম্য হচ্ছে না অনেকের। ছবির মর্মকথা বুঝতে বাবা-মায়ের শরণাপন্ন হচ্ছে শিশুরা। তবে অনেকেই সঠিক উত্তর দিতে পারছে না। তড়িঘড়ি করে অন্য ছবিতে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল শুক্রবার বিকালে এমন চিত্রই দেখা গেলো নগরীর শিল্পকলা একাডেমির ডিআইআরআই আর্ন্তজাতিক ছবি প্রদর্শনীর দি¦তীয় দিনে।
প্রদর্শনীর ছবিগুলো মূলত সুফি নৃত্যের। ১৩ শতকের মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামী ব্যক্তিত্ব জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমির অনুসারীদের থেকে এই নৃত্যের উদ্ভব বলে ধারণা করা হয়। এদেরকে বলা হয় যারা মেভলভি। রুমি বিশ্বাস করতেন, সঙ্গীত, কবিতা এবং নাচ- সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌঁছানোর একেকটি পন্থা। তার এই বিশ্বাসের পথ ধরেই কালক্রমে সুফি নৃত্য অনুশীলন থেকে অনুষ্ঠানে পরিণত হয়।
সুফি নৃত্য কখনও সুফি সঙ্গীত আবার কখনো শক্তিশালী জিকিরের পুনরাবৃত্তির সাথে সাথে পরিচালিত হয়। জিকিরের আওয়াজ সময়ের আবর্তনের সাথে সাথে হৃদস্পন্দনকেই যেন স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে সুফি নৃত্যের মূল কথাই হল, শরীর এবং মনের আত্মসমর্পণ। ক্রমাগত ঘূর্ণনের মাধ্যমে দরবেশ তার সমস্ত চিন্তাচেতনা একটি কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসার মাধ্যমে রহস্যময় উন্মাদনার জালে আবদ্ধ হন। সময়ের সাথে সাথে দরবেশ নিজের শরীর এবং মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন এবং পরিপূর্ণতার স্বাদ আস্বাদন করতে থাকেন।
এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এবং পটুয়া কামরুল হাসান গ্যালারিতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে শুধু সুফি নৃত্যের ছবি নয়। করোনা, দেশ – বিদেশের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যসহ মসজিদ, মাজারের ছবিও দেখা গেছে।
প্রদর্শনীতে বিশ্বের ৫১টি দেশের ৭২৪ জন আলোকচিত্রী প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। মোট ২৫৭৮টি ছবি থেকে ২০০টি ছবি বাছাই করা হয়। চার ক্যাটাগরিতে ৫৯ আলোকচিত্রীর ১৫১টি ছবিকে পুরস্কার দেয়া হয়। আজ শনিবার মেলার শেষ দিন।
পুরস্কারপ্রাপ্ত আলোকচিত্রীদের মধ্যে চট্টগ্রামের শ্যামল নন্দী বলেন, ‘এ ধরনের প্রদর্শনীর সংখ্যা বাড়নো উচিত। এতে কাজে উৎসাহ পান ছবির কারিগররা। আমার পাঁচটা ছবির মধ্যে দুটো ছবি বাছাই করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি ছবি মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে তোলা। ছবি তোলার ক্ষেত্রে ভালো ক্যামেরা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি ছবির অর্থকেই প্রাধান্য দিই। ’