সুপ্রভাত ডেস্ক »
দীর্ঘদিন ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বগতি বজায় রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নীতি সুদহার বাড়ানোর মূল উদ্দেশ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে অর্থের সরবরাহ কমানো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে, বাজারে অর্থের সরবরাহ বেশি এবং সে কারণে মূল্যস্ফীতির সূচক বাড়ছে, তাহলে অর্থপ্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে তারা।
নীতি সুদহার বৃদ্ধির অর্থ হলো, ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত সুদ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ করতে হবে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে ঋণ দেয়, তার সুদহারও বাড়ে। নীতি সুদহার বেশি হলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে নিরুৎসাহিত হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে। গত জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর আগে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এরপর গত জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি আবার দুই অঙ্কের ঘর ছাড়ায়।
গত জুলাই মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে। বিবিএসের হিসাবে, জুনে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই এক মাসের ব্যবধানে হঠাৎ খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশ অনেকটা বেড়ে যায়।
এদিকে জুলাইয়ে খাদ্যের মূল্যস্ফীতির যে হার দাঁড়িয়েছে, তা গত ১৩ বছর ৪ মাস বা ১৬০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ সর্বোচ্চ খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ২০১১ সালের এপ্রিলে, ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এরপর আর কখনো খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশে ওঠেনি।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির এক সভায় ওভারনাইট রেপো নীতি সুদহার বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিদ্যমান নীতি সুদহার ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে নতুন সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সুদের হার বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত আগামী মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে।
এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করার লক্ষ্যে নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুদহার ১০ শতাংশ থেকে ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশে এবং নিচের সীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৭ শতাংশ থেকে ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার সর্বশেষ গত ৮ মে বাড়িয়েছিল। তখন মুদ্রানীতি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়। একই দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণের পদ্ধতি স্মার্টও (সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) বাতিল করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন জানিয়েছিল, ব্যাংকঋণের সুদহার সম্পূর্ণ বাজারভিত্তিক করার লক্ষ্যে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সূত্র: অর্থসূচক।