সুদহার কমেছে ট্রেজারি বিল-বন্ডে

সুপ্রভাত ডেস্ক  »

ব্যাংকগুলোর ‘আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায়’ ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সুদহার ১০ থেকে ২৯ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, গেল মঙ্গলবার পাঁচ বছর মেয়াদে ১৮ হাজার কোটি টাকা অফার করে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে নিলামে তোলা হয় ৪ হাজার কোটি টাকা। তাতে সুদহার দাঁড়ায় ১২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এর আগে গত ৬ জানুয়ারি সবশেষ নিলামে এই বন্ডের সুদহার ছিল ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সেই হিসাবে পাঁচ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডে সুদহার কমেছে ২৯ বেসিস পয়েন্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সুদহার কমেছে ট্রেজারি বিলেও। গত সোমবার ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলে সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এই মেয়াদে বিল বিক্রি হয় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।

এদিন ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে ২ হাজার কোটি টাকা বিক্রি হয়, যার সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আর ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলে ২ হাজার কোটি টাকা বিক্রি হয় ১১ দশমিক ৮১ শতাংশ সুদে। ট্রেজারি বিল হল একটি স্বল্পমেয়াদি আর্থিক ঋণপত্র যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকার কর্তৃক জারি করা হয়। খবর বিডিনিউজ।

সাধারণত এই বিলগুলো এক বছর বা এর কম মেয়াদি হয়ে থাকে। এটি একটি নিরাপদ এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবেও পরিচিত। কারণ এর উপর সুদ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা থাকে এবং সরকারের পক্ষে ইস্যু করা হয়। ট্রেজারি বিল ও বন্ড সাধারণত যে কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি কিনতে পারেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের অতিরিক্ত তারল্য ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করছে। সবশেষ ৬ জানুয়ারি যখন ট্রেজারি বিলের নিলাম হয়, তখন ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলে সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ; ১৮২ দিনের ক্ষেত্রে ছিল ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ সুদহার ছিল ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলে। ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ টাকা নিলামে তোলে, তার চেয়ে সরকারের চাহিদা কম থাকলে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের হার কমে যায়। আর সরকারের চাহিদার চেয়ে নিলামে কম টাকা উঠলে সাধারণত সুদহার বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকে আমানতে প্রবৃদ্ধি কম। তবে ভালো ব্যাংকগুলো কিন্তু ঠিকই আমানত পাচ্ছে। আবার আর্থিক দিক থেকে যেসব ব্যাংক অবস্থাসম্পন্ন, সেসব ব্যাংকে এমনিতেই তারল্যের জোগান অন্য ব্যাংকের চেয়ে অনেক ভালো থাকে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বেশ কিছু ব্যাংকের অবস্থা খারাপ। সে সব ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিচ্ছেন অনেকে। তবে এসব গ্রাহক ভালো ব্যাংকে টাকা রাখছেন। আর ভালো ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল-বন্ডেও বিনিয়োগ করছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণ কমেছে। তাতে ব্যাংকে টাকা পড়ে আছে। সেই ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের জন্য ট্রেজারি বিল ও বন্ডই বেছে নিয়েছে। কারণ এখানে বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়।’ তিনি বলেন, ‘ঋণের চাহিদা কমেছে। আর ঋণ বিতরণ করলে ব্যাংকগুলোকে সিআরআর ও এসএলআর খাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখতে হয়। তাই ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।’

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সরকারে নিট ঋণ নেয়া কমিয়ে দিয়েছে; সরকার খরচ কমাতে চাইছে। আর বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কম হওয়ায় ব্যাংকগুলো এই খাতে বিনিয়োগে ঝুঁকছে।’