সুপ্রভাত ডেস্ক
কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাজারে দেশের যে সব পণ্যের চাহিদা রয়েছে, তারমধ্যে অন্যতম হলো সুগন্ধি চাল। অথচ বিদায়ী অর্থবছরের পুরোটা সময় এই পণ্যের রপ্তানি বন্ধ থাকায় সবজি, ফল, শুকনো খাবার, চাল এবং মশলাসহ কাঁচা ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের রপ্তানি ব্যাপকহারে কমে গেছে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৯০ লাখ ডলার আয় হয়েছিল শুধুমাত্র সুগন্ধি চালের রপ্তানির মাধ্যমে। বছরজুড়ে সুগন্ধি চালের রপ্তনিতে নিষেধাজ্ঞা, এর পাশাপাশি আলু এবং বাঁধাকপির রপ্তানি কম হওয়া- এই খাতে আয় কমে যাওয়ার প্রধান কারণ বলে জানান রপ্তানিকারকরা। খবর টিবিএস। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১,৩৯৪.১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় এসেছে ৮৪৩ মিলিয়ন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৯.৫৩ শতাংশ কম।
শুধু লক্ষ্যমাত্রার তুলনায়ই কম নয়, ২০২১-২২ অর্থবছরের ১,১৬২.২৫ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানির তুলনায়ও এটি ২৭.৪৭ শতাংশ কম।
জানা যায়, গত বছরের ৩০ জুন থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে সুগন্ধি চালের রপ্তানি বন্ধ রাখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে সুগন্ধি চালের রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কিন্তু চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আসার পরও দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি। বর্তমানে এটি তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আলু এবং বাঁধাকপি রপ্তানি করা হয়েছিল প্রায় ১ লাখ টনের কাছাকাছি। এ বছর যেটা ২০ হাজার টনও ছাড়াতে পারেনি। রপ্তানিকারকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তৈরি হওয়া বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি, প্যাকেজিং দুর্বলতা, অতিরিক্ত কার্গো ভাড়ার কারণে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়াসহ কিছু কারণে পণ্য দুটির রপ্তানি কমে গেছে। প্যাকেজিং ও প্রসেসিং দুর্বলতা কাটাতে না পারলে পণ্যগুলোর বিশ্ববাজারে স্থায়ী দখল নেওয়ার সুযোগ কম বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। রপ্তানি বাজার উন্নয়নে কাজ করছেন স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তা ইমরান হোসেন বলেন, ‘কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে টেস্ট, প্যাকেজিং, প্রসেসিং-এ সরকার যে উদ্যোগ নিচ্ছে তা রপ্তানি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।’
সরকার শ্যামপুরের সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজ আধুনিকায়নের কাজ করছে, মাসখানেকের মধ্যেই এটি পুরোদমে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। প্যাকিং হাউজের এই ল্যাবে শাক-সবজি ও ফলমূলের নিরাপদ ও সেলফ লাইফ বৃদ্ধিতে উন্নত প্যাকেজিং, অটোমেটিক ওয়াশিং ড্রাইং প্ল্যান্ট, হটওয়াটার ট্রিটমেন্ট, কুল শকের জন্য কোল্ডরুম সচল রাখাসহ ল্যাবরেটরিতে নানান ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ থাকবে। এই প্যাকিং হাউজ নিয়ে আশা প্রকাশ করলেও এটি যে প্রয়োজনের তুলনায় কম, তা স্বীকার করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ভারতে এ ধরনের প্যাকিং হাউজের সংখ্যা ৫০০ এরও বেশি, থাইল্যান্ডে এটা অগুনতি। আমরা কেবল শুরু করছি। এরজন্য বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে, বিনিয়োগ করতে হবে।’ এদিকে, সুগন্ধি চালের রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার জন্য গত মে মাসের শেষভাগে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য অনুমতি প্রদানের প্রক্রিয়া এখনও শেষ করতে পারেনি। স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানি বাস্কেটে সুগন্ধি চাল একটা বড় প্রডাক্ট, এটা বন্ধ থাকায় তার একটা প্রভাব রপ্তানি আয়ে পড়েছে।’ ‘সুগন্ধি চালের রপ্তানির অনুমতি নিয়ে কাজ চলছে এবং এটি একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে,’ যোগ করেন তিনি। ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, দেশে প্রায় ১৮.৩৫ লাখ মেট্রিক টন সুগন্ধি চাল উৎপাদন হয়েছে গত অর্থবছরে। চাহিদার তুলনায় এই পরিমাণ কয়েক লাখ টন বেশি। অথচ দেশের রপ্তানি ১০ হাজার মে টনের নিচে। এ কারণে পণ্যটির রপ্তানির অনুমতি প্রদান করা হলে ভোক্তার চালের চাহিদায় নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই।
স্কয়ার, এসিআই, বোম্বে সুইটস সহ ৪০ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞার কারণে রপ্তানি করতে পারছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত অনুমতি প্রদান না করলে চলতি অর্থবছরেও রপ্তানি আয়ে এর প্রভাব পড়বে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য মালিয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপ অঞ্চলসহ বিশ্বের ১৩৬টি দেশে সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানিতে ভালো করেছে চা, তামাক, মশলা। কিন্তু ড্রাই ফুডে আগের বছরের তুলনায় ১৯.৮৪ শতাংশ, ফলমূলে ৮১.১০ শতাংশ, সবজিতে ৩৮.৮০ শতাংশ রপ্তানি কম হয়েছে। এর বাইরে ফ্রোজেন ফুডের রপ্তানিও আগের বছরের তুলনায় ২০.৭৬ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মো. মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে হলে আমাদের প্যাকেজিং, ট্রান্সপোর্ট, আধুনিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষাসহ বিভিন্ন স্থানে আরও দক্ষ হতে হবে।’