সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক :
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে চলতি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে চমকে দিয়েছিল সুইজারল্যান্ড। কোয়ার্টারেও তারা সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল।
বিশেষ করে দলটির গোলরক্ষক সোমার তো রীতিমত দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। অসাধারণ কিছু সেভের কারণে ম্যাচের নায়ক পারতেন তিনি। কিন্তু টাইব্রেকারে আর পারলেন না। হার মানলো সুইসরাও। আর কষ্টার্জিত এই জয়ে আসরের প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠলো লুইস এনরিকের শিষ্যরা।
শুক্রবার রাতে রাশিয়ার ক্রেস্তোভস্কি স্টেডিয়ামে আসরের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ে পেনাল্টি শুটআউটে ৩-১ ব্যবধানে জিতেছে স্পেন। নির্ধারিত সময় শেষে ১-১ গোলে সমতা বিরাজ করায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় খেলা। তাতেও ফল না আসায় পেনাল্টি শুট-আউটে নির্ধারিত হয় বিজয়ী দল। সুইসদের বিপক্ষে এই নিয়ে শেষ ২৩ বারের সম্মুখসমরে ১৭তম জয় তুলে নিল স্প্যানিশরা। তারা হেরেছে মাত্র একটিতে, ড্র ৫টিতে। ম্যাচের আগেই বড় ধাক্কা খায় কোয়ার্টারে ফ্রান্সকে পেনাল্টি শুট-আউটে ৫-৪ গোলে হারিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নেওয়া সুইজারল্যান্ড। কার্ড সমস্যায় এই মাঠে নামতে পারেননি দলের অন্যতম সেরা তারকা জাকা। তার বদলে শুরুর একাদশে নামেন আরেক মিডফিল্ডার জাকারিয়া। অন্যদিকে পাউ তোরেস ও জর্দি আলবাকে শুরু থেকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় স্পেন। এরিক গার্সিয়া ও গায়াকে বসতে হয় রিজার্ভ বেঞ্চে। ম্যাচের অষ্টম মিনিটেই আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় ৫-৩ গোলে ক্রোয়েশিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে চলতি ইউরো কাপের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট কাটা স্পেন। কোকের কর্নার থেকে আলবার শট সুইজারল্যান্ডের জালে জড়ানোর আগে সুইস মিডফিল্ডার জাকারিয়ার শরীর স্পর্শ করে। ফলে গোলটিকে জাকারিয়ার আত্মঘাতী গোল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জাকারিয়ার গোলের সঙ্গে সঙ্গে চলতি ইউরোয় আত্মগাতী গোলের সংখ্যা দুই অঙ্কে (১০টি) পৌঁছে গেল। আগের সবগুলি ইউরো মিলিয়ে মোট ৯টি আত্মঘাতী গোল হয়েছিল। এবার একটি টুর্নামেন্টেই আগের মিলিত নজির ছাপিয়ে গেল। এগিয়ে যাওয়ার পর স্পেনের খেলায় গতির ঝলক দেখা যায়। কিন্তু প্রধমার্ধে আর সাফল্য আসেনি। ১৭ মিনিটের মাথায় কোকের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ২৫ মিনিটের মাথায় অ্যাপিলিকুয়েতার শট জালের খোঁজ পায়নি। ৬৪তম মিনিটে জুবেরের শট প্রতিহত করেন স্পিনিশ গোলরক্ষক উনাই সাইমন। ৩৯তম মিনিটে সুইজারল্যান্ডের আক্রমণ ব্যর্থ হয়। স্পেনের পোস্ট লক্ষ্য করে উইডমারের নেওয়া শট মাঠের বাইরে চলে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে সুইসরা ম্যাচে ফেরার জোর প্রচেষ্টা চালায়। ৪৮ মিনিটের মাথায় আকাঞ্জি বল স্পেনের জালে রাখতে ব্যর্থ হন। এরপর ৫৬তম মিনিটে জাকারিয়ার শট অল্পের জন্য জাল খুঁজে পায়নি। ৬৪ মিনিটের মাথায় জুবেরের শট প্রতিহত করেন স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সাইমন। বেশ কয়েকটি ভালো আক্রমণের পর ৬৮তম মিনিটে শাকিরির গোলে সমতায় ফেরে সুইজারল্যান্ড। লাপোর্তে ও পাউ তোরেসের ভুল বোঝাবুঝির সুযোগে স্পেনের বক্সের ঠিক সামনে বল পেয়ে যান ফ্রেউলার। তিনি বল বাড়িয়ে দেন শাকিরির কাছে। ডান পায়ের শটে গোল করতে ভুল করেননি শাকিরি। সুইজারল্যান্ডের হয়ে ইউরোয় সবথেকে বেশি গোল করার রেকর্ড গড়লেন তিনি। এই নিয়ে ইউরোয় মোট ৪টি গোল হলো তার। সমতায় ফেরা স্বস্তির কিছুক্ষণ পরই বড় ধাক্কা খায় সুইজারল্যান্ড। মোরেনোকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেল রেমো ফ্রেউলার। এক মিনিট পর মোরেনোর শট জাল মিস করে। এরপর নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে এবং যোগ করা সময়েও সমতা বিরাজ করায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে স্পেনের সামনে যেন রোমের প্রাচীর দাঁড়ান সুইস গোলরক্ষক সোমার। স্প্যানিশদের মুহুর্মুহু আক্রমণের মুখে কম করে হলেও ৯টা দুর্দান্ত সেভ করেছেন তিনি। তার জন্যই গোলবন্যায় ভেসে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচে সুইজারল্যান্ড।
প্রথম অর্ধের শুরুতেই মোরেনোর শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে গোলের সহজ সুযোগ হাতছাড়া হয় স্পেনের। ৯৬তম মিনিটে আলবার শট প্রতিহত করেন সোমার। এক মিনিট পরেই বাঁচান লরেন্তের শট। ১০১তম মিনিটে ফের মোরেনো এবং এরপর টানা দুই বার মিকেলের শট আটকান সোমার। ওই অর্ধে কেউ গোল পায়নি। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর পর ওলমোর শট প্রতিহত করেন সোমার।
আক্রমণে শক্তি বাড়াতে ১১৩তম মিনিটে পাউ তোরেসকে তুলে নিয়ে আলকান্তারাকে মাঠে নামায় স্পেন। ডিফেন্ডার সরিয়ে বাড়তি মিডফিল্ডার নামিয়েও অবশ্য লক্ষ্য পূরণ হয়নি এনরিকের। বরং এবারও স্পেনের একতরফা আক্রমণ প্রতিহত করেন সোমার। এরপর পেদ্রিকে তুলে নিয়ে রদ্রিকে নামায় স্পেন। কিন্তু খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
পেনাল্টি শুটআউটের শুরুতেই ধাক্কা খায় স্পেন। সার্জিও বুসকেতসের শট পোস্টে প্রতিহত হয়। কিন্তু লক্ষ্যভেদ করেন সুইজারল্যান্ডের গাভরানোভিচ। দানি ওমলার গোলে সমতায় ফেরে স্পেন। এরপর ফ্যাবিয়ানের পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে দেন উনাই। জবাবে রদ্রির শট ঠেকান সোমার। এরপর আকাঞ্জির শট ঠেকিয়ে দেন স্পেন গোলরক্ষক। তবে মোরেনো লক্ষ্যভেদ করে স্পেনকে এগিয়ে দেন। এরপর সুইজারল্যান্ডের ভার্গাসের পেনাল্টি মিসের পর মিকেলের গোলে ভাগ্য খুলে যায় স্পেনের। শেষ শট আর নিতে হয়নি। খবর বাংলানিউজের