উখিয়া-টেকনাফ
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মানবপাচারকারী চক্র। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে তারা অত্যন্ত গোপনে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মকাণ্ড। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে মাঝে মধ্যে সিন্ডিকেট সদস্যরা ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক ফোকরে তারা জেল থেকে বেরিয়ে আবারও শুরু করে মানবপাচার। স্থানীয়দের পাশাপাশি মালয়েশিয়া পাচার ভিত্তিক সিন্ডিকেটে যোগ হয়েছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ তাদের সাথে যুক্ত হয়ে পাচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার উপকূলীয় ইউনিয়ন জালিয়াপালং এবং টেকনাফের উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়া ও শাহপরীর দ্বীপকে তারা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রথমে পাচারকারী দল মালয়েশিয়াগামীদের উপকূলীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে জড়ো করে। পরে সুযোগ বুঝে রাতের আঁধারে পাচারের উদ্দেশ্যে ট্রলারে তুলে দেয়। অনেক সময় এসব পাচারকারীদল তাদের সাথে প্রতারণা করে ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে গিয়ে দু’একদিন কালক্ষেপণ করে আবারও একই জায়গায় অথবা উপকূলের যে কোনস্থানে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে টেকনাফের বাহারছড়া উপকূল থেকে শুক্রবার ভোররাতে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ উপকূল থেকে ৫৪ রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করেছে র্যাব। এ সময় তাদের পাচারে জড়িত দুই দালাল ও স্থানীয় একজনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে।
কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর উপ-অধিনায়ক তানভীর হাসান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে বাহারছড়ার শামলাপুর চ্যানেল থেকে ৫৪ রোহিঙ্গা, দুই দালাল ও স্থানীয় একজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের ব্যবহৃত ট্রলারটি জব্দ করা হয়।
আটক রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘মূলত দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল আটক রোহিঙ্গাদের।
অপরদিকে, ২১ মার্চ বিকালে মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে মালয়েশিয়াগামী ১৪৯ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া এসব রোহিঙ্গারা দালালের সহযোগিতায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ট্রলারে করে সাগরপথে রওনা দেয়। দালাল চক্রের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে স্বপ্নের মালয়েশিয়া যেতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোহিঙ্গারা ট্রলারে ওঠেছিলো। কিন্তু সাগরে কোস্টগার্ড ও নৌ বাহিনীর কড়াকড়িতে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ট্রলারটি যেতে পারেনি। প্রায় এক সপ্তাহ’র চেষ্টাতেও সম্ভব না হওয়ায় মালয়েশিয়া পৌঁছেছে বলে নারী, শিশুসহ ১৪৯ জন রোহিঙ্গাকে সোনাদিয়ার চরে নামিয়ে দিয়ে দালাল চক্র ট্রলার নিয়ে পালিয়ে যায়। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গার মধ্যে ৭৫ জন নারী, ৫১ জন পুরুষ ও ২৩ জন শিশু রয়েছে। পরে উদ্ধার হওয়া এসব রোহিঙ্গাদের ২২ মার্চ ভোরে ৩টি বাসে করে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম বোটক্লাবে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ভাসানচরে পাঠানো হয়। ইতোপূর্বে আরো প্রায় ২৩ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন বলেন, পাচারকারীদের ধরতে প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এবং তারা ধরাও পড়ছে। তারা যেন সহজে জেল থেকে ছাড়া না পায়, প্রশাসনকে সেদিকে নজর দিতে হবে বেশি।
উখিয়া জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন পাচার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে পাচারকারী সিন্ডিকেট। তাদের খপ্পরে পড়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে।
এলাকার সচেতন মহল জানিয়েছেন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নজর এড়িয়ে বহু রোহিঙ্গা দালালের মাধ্যমে পাচার হয়ে বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। এবং তাদের পরিবারের অনেকেই এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে আছেন। এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। ওখান থেকে সিগন্যাল আসলে তারা এখান থেকে দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।