নিজস্ব প্রতিবেদক »
সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরায় তুলার গুদামে লাগা আগুন ১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। শনিবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আগুন নেভানো যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় জেলা প্রশাসকের অনুরোধে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিটের সঙ্গে রাত ৯টায় যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনীর ফায়ার ফাইটিং ইউনিটও।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের অনুরোধে সেনাবাহিনীর টিম ঘটনাস্থলে আসে। শনিবার রাত ৯টায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদের নেতৃত্বে একটি ফায়ার ফাইটিং ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছেন বলে জানান ঘটনাস্থলে থাকা জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম।
আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডারের কাছে সহায়তা চান জেলা প্রশাসক।
এর আগে, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখানে আশপাশে কোথাও পানি নেই। একটা খাল আছে, সেখানে পানি নেই। দূর থেকে পানি এনে কাজ করতে হচ্ছে, এটা সমস্যা। আমরা সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামের জিওসি মহোদয়ের সহায়তা চেয়েছি। প্রয়োজনে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর পানির ভাউচারগুলো নিয়ে যদি উনারা সহযোগিতা দেন, তাহলে আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে মনে করছি।’
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার নাগাদে সীতাকু-ের কুমিরা এলাকায় নেমসন কনটেইনার ডিপোর বাইরে একটি তুলার গুদামে আগুন লাগে। মূলত ওয়েল্ডিংয়ের আগুনের স্ফূলিঙ্গ থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিস, সীতাকু- উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসন।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার সময় তুলার গুদামে আগুন লাগলে পাশে থাকা খালের পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পরে আরও ১০টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়।
চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক মো. আব্দুল হালিম সুপ্রভাতকে বলেন, তুলার গুদামে এখনো আগুন জ্বলছে। তবে তীব্রতা আগের থেকে কিছুটা কমেছে। তুলার গুদামের দেয়াল ভেঙে পড়ছে। উপরের ছাদ ভেঙে পড়েছে। আমরা এখনো গুদামে প্রবেশ করতে পারিনি। ভেতরে গেলে প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে। বাইরে থেকে পানি ছিটানোর কাজ করছি। আশেপাশে পানির উৎস পাওয়া খুবই কষ্টকর হয়েছে। বর্তমান ১ কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনতে হচ্ছে।
সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আগুন লাগা গুদামটির মালিক এসএল স্টিল করপোরেশনের মালিক লোকমান হোসেন। তিনি গুদামটি ভাড়া দিয়েছেন ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেড নামে একটি সুতা তৈরির কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে। তুলাগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। ওয়েল্ডিংয়ের আগুনের স্ফূলিঙ্গ থেকে আগুনের সূত্রপাত প্রাথমিকভাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
সীতাকু- থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী কাজ করছে। অনেক দূর থেকে পানি আনতে হচ্ছে। এ জন্য আগুন নেভাতে আরও সময় লাগতে পারে।
তদন্ত কমিটি গঠন
চট্টগ্রামের সীতাকু-ে তুলার গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকা- তদন্তে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলমকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে।
কমিটিতে জেলা পুলিশ সুপার, শিল্প পুলিশ সুপার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল করপোরেশন (বিটিএমসি), বিস্ফোরক পরিদফতর, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএম) একজন করে প্রতিনিধি এবং সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সীতাকু- থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সদস্য করা হয়েছে।
কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে জানান এনডিসি তৌহিদুল ইসলাম।