নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী »
অর্ধেক সেমি পাকা, অর্ধেক পাকা ১৮ ফুট প্রস্থ এবং ৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে বাড়ি। বাড়ির রাস্তা এবং বাড়ির চারিদিকে ৯টি সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ৬টি বৈদ্যুতিক ডিভাইস। বাড়ির ভিতর বসে ক্যামেরা দেখে দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবার করে এসেছে গ্যাস পাম্প ডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ কমপক্ষে ৬টি মামলার ফেরারি আসামি জাহাঙ্গীর আলম (৩২)।
ওই ঘরে প্রায়শ নারীর কান্না শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে তাদের ওপরও চালাতো নির্যাতন। স্থানীয়দের ভয় দেখাতে প্রকাশ্যে বন্দুকের গুলি ছুঁড়ত সে।
পুলিশ অভিযান চালিয়ে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ওই বাড়িতে ঢুকতে না পেরে বৈদ্যুতিক ডিভাইস দিয়ে কী করে এবং ওই রহস্যজনক বাড়িতে কী কী আছে তা জানা যায়নি।
জানা গেছে, গ্রামবাসীর ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে বাঁশখালী থানা পুলিশ শুক্রবার রাত ১০টায় ওই রহস্যজনক বাড়িতে অভিযানে গেলে জাহাঙ্গীর দ্রুত দরজায় তালা আটকে ১ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ গ্রামবাসীর থেকে খবর নিয়ে তার সহযোগী চিহ্নিত মাদক কারবারি মো. রাজীবের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২০ লিটার চোলাই মদ এবং ৫০০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে। এসময় পুলিশ মো. রাজীবকে গ্রেফতার করে। সে পাইরাং গ্রামের মৃত রশিদ আহম্মদের ছেলে।
গতকাল শনিবার বেলা ২টায় জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর স্থানীয় মৃত ফজল কাদেরের ছেলে। তার মা নুর আয়েশা, দুই ভাই মামুনুর রশিদ, হারুনুর রশিদ ওই বাড়ির পাশে তাদের পুরাতন বাড়িতে থাকে। জাহাঙ্গীর বিয়ে করেনি। জাহাঙ্গীর ওই রহস্যজনক বাড়ির পাশে ৪টি গরু নিয়ে খামারও করেছে।
প্রতিবেশী মাহমুদুল আলম, নুরুসালাম, আব্দুল মতলব, রহিমা খাতুনসহ অনেকে বলেন, জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসায় জড়িত। ৬টি মামলার পলাতক আসামি। তার রহস্যজনক বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ডিভাইস বসিয়ে সে মাদক কারবার ও জলসা বসায়। প্রায় সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুঁড়ে উল্লাস করে। তার একটি লম্বা ও একটি বাটি অবৈধ অস্ত্র হাতে দেখা যায়। শনিবার রাতে পুলিশ অভিযান চালানোর পর থেকে তার বাড়িতে তালা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রশিদ বলেন, জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে মাদক কারবারি করছে দীর্ঘদিন ধরে। তার খুঁটির জোর কিসে তা বুঝি না। পুরো সমাজকে ধ্বংস করে ফেলেছে। তার ভয়ংকর নারী নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পাড়ার ৪ গৃহবধূর সংসার ভেঙেছে।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. আরিফুর রহমান বলেন, ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে মাদক কারবারি জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছিল। ওই সময় সিসিটিভি ক্যামেরা এবং বৈদ্যুতিক ডিভাইসের সহযোগিতায় অভিযানের বিষয় টের পেয়ে সে গুলি ছুঁড়ে বাড়িতে তালা আটকে পালিয়ে যায়। গ্রাম পুলিশ মো. মোরশেদের জিম্মায় রাখা হয়েছে বাড়িটি।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, জাহাঙ্গীর আলমকে ধরার জন্য পুলিশ মাঠে তৎপর রয়েছে।