কারখানা সচল রাখাই
প্রাথীদের জন্য চ্যালেঞ্জ
সুমন শাহ্, আনোয়ারা
কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে রাঙ্গাদিয়ায় অবস্থিত রাষ্ট্রীয় সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) সিবিএ নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। প্রচার-প্রচারণায় শ্রমিক ও কর্মচারিরা এখন দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিনভর কাজের ফাঁকে বা রাতের একটা অংশজুঁড়ে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত। নিজ ও নিজের প্যানেলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রচারণায় আছে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরাও। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে যাচ্ছেন তারা। ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাচ্ছেন ভোট।
সিইউএফএল বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকলেও বহুজাতিক মালিকানার কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে (কাফকো) উৎপাদন অনেকটাই স্বাভাবিক। গ্যাস সংকট, যান্ত্রিক ত্রুটি বা মিঠা পানির স্বল্পতার অজুহাতে বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকায় চরম সংকটকাল পার করে থাকে সরকারি মালিকানা সিইউএফএল। এতে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও বিরাজ করে উৎকণ্ঠা। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধ কারখানায় এখন চলছে সিবিএ নির্বাচনের আমেজ। আগামীকাল ২৮ অক্টোবর বুধবার অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। নির্বাচনে শ্রমিকদের দাবি দাওয়াসহ সবকিছু ছাপিয়ে কারখানা নিরবিচ্ছিন্ন সচল রাখাটাই প্রার্থীদের কাছে হয়ে উঠেছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ ।
এ নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো. আবদুর রহিম, মো. আবুল বশর ও একিউ এম সেলিম রেজা চৌধুরী। কার্যকরী সভাপতি পদে মো. নুরুল আমিন, মো. বজলুর রহমান ভূইয়া ও মো. মাহবুবুল আলম; সহ সভাপতি পদে মো. আলম মজুমদার, মো. দিদারুল আলম ও মোছলেম উদ্দিন; সাধারণ সম্পাদক পদে মো. আনোয়ারুল আজিম সবুজ, একেএম আমিনুর রহমান ও মো. হারুন-আর রশিদ; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে মো. ইলিয়াছ ও মো. এমরান খান; সহ সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল আলী, মো. আবদুল কুদ্দুছ, আলাউদ্দিন আহমেদ ও মো. হুমায়ূন কবির; অর্থ সম্পাদক এ এস এম আলমগীর চৌধুরী, মো. মোশাররফ হোসেন ও মো. সাহাব উদ্দিন; সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আসলাম উদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম, মো. রবিউল ইসলাম খান ও মো. শাহিনুর রশিদ; প্রচার সম্পাদক মো. মারফত আলীম আকন্দ, মো. শামীম ও সোহাগ তালুকদার; দপ্তর সম্পাদক মো. আবদুল কাদের ও কাজী মহিউদ্দিন আহমেদ এবং আইন সম্পাদক পদে আনিসুর রহমান, এম. কে মহিউদ্দিন ও মোহাম্মদ সোলায়মান লড়ছেন।
জানা যায়, ১৯৮৭ সালে আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় রাষ্ট্রায়াত্ত সার কারখানা সিইউএফএল প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের ইউরিয়া সারের চাহিদা মেটাতে এই কারখানাটি ছিল অন্যতম ভরসা। পরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন সার কারখানা হলেও সিইউএফএলের সেই অর্থে আধুনিকায়ন আর হয়নি। কারখানাটির নির্মাণকারী জাপানি প্রতিষ্ঠান ২০ বছর মেয়াদ বেঁধে দিলেও পার হয়ে গেছে প্রায় ৩২ বছর। স্থাপনের পর থেকে একনাগাড়ে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সিইউএফএলের উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ছিল। ১৯৯৬ থেকে গ্যাস সংকট সিইউএফএলের জন্য বিপদ ডেকে আনে। বার বার গ্যাস সংকটের কারণে গ্যাসনির্ভর দেশের বৃহত্তম সার কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। এ কারণে ১৯৯৭ থেকে কারখানায় নানা ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। গত পাঁচ বছরে কারখানাটি চালু ছিল মাত্র ১১ মাস। সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর গ্যাস মেলায় ৯ সেপ্টেম্বর উৎপাদনে গেলেও দুই সপ্তাহ না যেতেই যান্ত্রিক সমস্যায় আবার বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটি। অথচ সিইউএফএলের পাশেই অবস্থিত বাংলাদেশ, জাপান, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডের যৌথ মালিকানার সার কারখানাটি উৎপাদন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, সিবিএ’র উচ্চকণ্ঠ না থাকায় সিইউএফএলে বার বার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে তা অন্য জায়গায় দেওয়া হচ্ছে। সিবিএ নেতাদের অদক্ষতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই এ জন্য দায়ী। বিভিন্ন সময় উৎপাদন বন্ধ থাকার কারণে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও বন্ধ থাকে। এ কারণে শ্রমিক-কর্মচারিরা কারখানা নিরবচ্ছিন্ন চালু রাখতে সক্ষম এমন নেতৃত্বই দেখতে চান বলে জানান।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. আনোয়ারুল আজিম সবুজ বলেন, এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। আমরা ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছি। আশা করছি ভোটারা আমাদের প্যানেলকে জয় যুক্ত করতে ইনশাআল্লাহ। প্রার্থী ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে অনেক প্রার্থী নির্বাচনের অংশগ্রহণ করছেন। যারা কোনো শ্রমিক কর্মচারীদের কাছে জনপ্রিয় নয় তারাই এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ গুলো করছে।
সিবিএ সভাপতি প্রার্থী মো. আবুল বশর বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে সিবিএ নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। ভোটারদের আন্তরিকতাও বেশ দেখতে পাচ্ছি। নির্বাচনে জয়ী হলে বন্ধ কারখানা সচল ও কারখানার অনিয়ম প্রতিরোধে শ্রমিকদের সাথে নিয়ে কাজ করব। আমি ও আমার প্যানেল জয়ী হবো-ইনশা আল্লাহ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার শ্যামল কান্তি নাথ বলেন, এখনো পর্যন্ত কোনো প্রার্থী বা ভোটার কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। নির্বাচনে কোনো ধরনের রাজনৈতিক দলীয় প্রভাব পড়বে না। ২৮ অক্টোবর বুধবার সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। এখানে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ৫৫০ জন।