সুপ্রভাত বিনোদন ডেস্ক »
পাকিস্তানের শাফকাত আমানত আলি তথা বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় এই সুফি ঘরানার শিল্পী প্রথমবার গাইলেন বাংলা গান। সহশিল্পী বাংলাদেশের সুকণ্ঠী-সুশ্রী সিঁথি সাহা। দুজনে মিলে গাইলেন ‘রাত জাগা পাখি’।
যা ২ ডিসেম্বর রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত হলো অন্তর্জালে, বিশ্বজুড়ে। আর এই আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিয়ে শাফকাত শোনালেন সৈয়দ আব্দুল হাদীর গাওয়া বিখ্যাত গান ‘কেউ কোনও দিন আমারে তো কথা দিলো না’। অন্যদিকে একই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে হাজির হয়ে সিঁথি সাহাকে সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন ওমর সানী। কারণ, ‘রাত জাগা পাখি’তে সিঁথির অভিনয়-এক্সপ্রেশন দেখে যারপরনাই মুগ্ধ এই নায়ক।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ইমপেটাস লাউঞ্জে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড-এর ব্র্যান্ড মেরিল নিবেদিত গানটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর, এমপি। বিশেষ অতিথির আসন উজ্জ্বল করেছেন স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামুয়েল এস চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর তার গায়ক হিসেবে কাজ করার মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। জানান, কোনও গানের অনুষ্ঠানে এলেই তার নিজের জীবনের একটা গল্প মনে পড়ে। সেটি হলো এমন, ‘‘১৯৬৬ সালে ঢাকায় আসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র হিসেবে। সে সময় প্রতি ২১শে ফেব্রুয়ারি ডাকসুর উদ্যোগে একটা অনুষ্ঠান হতো। তেমন একটা অনুষ্ঠানে আমাকে ধরে বসিয়ে দিলো গাওয়ার জন্য। বেটে-খাটো ছিলাম বলে সামনের সারিতেই বসার সুযোগ পেলাম। অথচ কী গাইলাম নিজেও জানি না! যেহেতু এক-দেড়শ লোকের সমবেত কণ্ঠ, তাই কে কী গাইলাম- কেউ জানি না। তবে কাজের কাজ হলো পরদিন খবরের পাতায় আমার ছবি ছাপা হলো, যেহেতু প্রথম সারিতে বসা! তো আমার বাবা-মা থাকতেন নীলফামারী। তারা খবরের কাগজে আমার ছবিটা দেখেন। কিছু দিন পর বাবার একটা চিঠি হাতে পেলাম। সেখানে লেখা, ‘খবরের কাগজে দেখিলাম তুমি মঞ্চে বসিয়া গান গাইতেছো। বুঝিতে পারিলাম, ঢাকায় সংগীতের কী দুরবস্থা চলিতেছে!’ বাবার এই চিঠি পড়ার পর আমি গান থেকে আজীবনের জন্য সরে দাঁড়াই।’’
সিঁথির প্রতি প্রধান অতিথির প্রত্যাশা ছিল এমন, ‘সিঁথি নামকরা একজন বিদেশি শিল্পীর সঙ্গে গান করেছেন। এটা আনন্দের। তবে আমরা চাইবো সামনে সিঁথির সঙ্গে বিদেশি শিল্পীরা গাইবার জন্য উন্মুখ থাকবে। কারণ, এখন আর আমরা পিছিয়ে নেই। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আছি। এই উন্নয়নটা অর্থনৈতিক হলে হবে না। আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, খেলা- সবদিকেই এই উন্নয়নটা জরুরি। তবেই উন্নয়নটা টেকসই হবে। সিঁথির অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক।’
এদিকে আসাদুজ্জামান নূরের বক্তব্য শেষে নায়ক ওমর সানী মুগ্ধতা প্রকাশ করেন সিঁথি সাহার ভিডিও পারফরম্যান্স দেখে। তিনি বলেন, ‘‘সিঁথির মধ্যে শুধু গানের দক্ষতা আছে তা নয়, অভিনয়েও তার দারুণ প্রতিভা রয়েছে। যেটা একটু আগে তার এই ভিডিওতে দেখলাম।’ এরপর পাশে দাঁড়ানো সিঁথিকে সরাসরি প্রস্তাব দিলেন অভিনয়ের। সানী বললেন, ‘অভিনয় করবা, করবা, করবা…?’ এই প্রস্তাবটা আমি করে রাখলাম। তোমার জন্য আমার পক্ষ থেকে অভিনয়ের দরজাটা খোলা।’’
এরপরই ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন শাফকাত আমানত আলি। মুগ্ধতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের সংগীত ও ফোক ফেস্ট আয়োজন নিয়ে। প্রশংসা করেন সিঁথি সাহার। আর সবাইকে চমকে দিয়ে গেয়ে শোনান সৈয়দ আব্দুল হাদীর গাওয়া বিখ্যাত গান- ‘কেউ কোনও দিন আমারে তো কথা দিলো না…’।
‘রাত জাগা পাখি’র কথা ও সুর করেছেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। গল্পনির্ভর ভিডিও নির্মাণ করেছে প্রেক্ষাগৃহ। এতে সিঁথির বিপরীতে মডেল হয়েছেন এবিএম সুমন।
নীল হুরেরজাহানের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শেষাংশে সিঁথি সাহা ও তার দল সরাসরি গেয়ে শোনান এক ডজন গান। তার আগে বললেন, ‘আজ আমার জীবনের বিশেষ একটা দিন। কারণ, এমন আয়োজন তো করা হয় না। এভাবে কথা বলারও সুযোগ হয় না। শাফকাতের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে তার একটি গান কাভার করার মাধ্যমে। এরপর সরাসরি দেখা হয়, ঢাকা ফোক ফেস্টে। এরপর ভার্চুয়ালি আমরা গান করার অনেক প্ল্যান করি। কারণ, বাংলা গানের প্রতি উনার আগ্রহ প্রচুর ছিল। তিনি বাংলা ভাষা একেবারেই জানেন না, তবু তিনি চেষ্টা করেছেন সঠিকভাবে গাইবার। এজন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’