সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক :
হেড কোচ থেকে শুরু করে ব্যাটিং কোচ, পেস বোলিং কোচ, স্পিন বোলিং কোচ, ফিল্ডিং কোচ, ট্রেইনার, ফিজিও, কম্পিউটার ও ভিডিও অ্যানালিস্ট- আট আটজন ভিনদেশি কোচিং স্টাফ এখন টিম বাংলাদেশের। এই তো সেদিন বিসিবি পরিচালক ও গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন জানালেন, বোর্ড নীতিগতভাবে হেড কোচ পদে একজন বিদেশিকেই রাখতে চায়। কেন রাখতে চায়? দেশী কোচদের ওপর আস্থা, বিশ্বাস কম? না অন্য কোনো কারণ আছে? তা নিয়ে আছে নানামত।
তবে এটা সত্য যে, বাংলাদেশে অন্তত তিনজন স্থানীয় প্রশিক্ষক আছেন যারা জাতীয় দলের হেড কোচ হবার দাবিদার। সে তালিকায় কম বেশি সবার প্রথম পছন্দ হলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। পরের দুজন- খালেদ মাহমুদ সুজন ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
বর্তমানে আইসিসির এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার দায়িত্বে থাকা বুলবুল সবসময়ই জাতীয় দলের হেড কোচ হবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই গত মাসে একটি ইউটিউব লাইভে এসেও বুলবুল বলেছেন, ‘আমি অপেক্ষায় আছি। দায়িত্ব পেলে তা নিতে প্রস্তুত।’
খালেদ মাহমুদ সুজন আনুষ্ঠানিকভাবে কখনই জাতীয় দলের হেড কোচের দায়িত্ব পালন করেননি। তবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে চলে যাবার পর তিনি ভিন্ন পদবি এঁটে জাতীয় দল পরিচর্যায় ছিলেন। ২০১৫ ও ২০১৯ সালে পর পর দুই বিশ্বকাপে ম্যানেজারের ভৃমিকাও পালন করেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে জনপ্রিয় ও তারকায় ঠাসা আবাহনী আর বিপিএলে অন্যতম সেরা দল গত দুইবারের রানার্সআপ ঢাকা ডাইনামাইটসের কোচিং করানো সুজনও ভবিষ্যতে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
এর বাইরে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও কিন্তু বেশ ভালো বিকল্প। অনেকের চোখে, সালাউদ্দিন বরং বেটার অপশন। বিশেষ করে বর্তমানে যারা বাংলাদেশ দলের চালিকা ও প্রাণশক্তি- সেই সাকিব , তামিম, মুশফিক ও মুমিনুলরা তার ছাত্র। তাদের সাথে সম্পর্কটা সরাসরি গুরু-শিষ্যের।
ঢাকাই ক্লাব ক্রিকেটে গাজী গ্রুপের সাথে গাঁট বাঁধা সালাউদ্দিন বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সেরও কোচ। জাতীয় দলের সহকারি কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফিল্ডিং কোচও ছিলেন। ন্যাশনাল টিমের কোচিং স্টাফের অন্যতম সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন।
খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, সালাউদ্দিনের ইচ্ছে কি? অগ্রজ প্রতিম বুলবুল-সুজনের মত সালাউদ্দিনও কি জাতীয় দলের হেড কোচ হতে চান? তিনিও কি দেশের প্রধান কোচ হবার স্বপ্ন দেখেন? এ প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরপাক খায়।
অবশেষে সালাউদ্দিন নিজেই দিলেন এর জবাব। জানিয়ে দিলেন, ‘স্বপ্ন সবাই দেখে। আমিও দেখি না যে, তা না। ইচ্ছা তো সবারই আছে। আমিও চাই জাতীয় দলের প্রধান কোচ হতে।’
কাল বুধবার রাতে ‘ক্রিকফ্রেঞ্জি’র সাথে এক ফেসবুক লাইভে এমন কথাই জানিয়েছেন কোচ সালাউদ্দিন। তবে তার অনুভব, আগামী কয়েক বছর জাতীয় দলের হেড কোচ হওয়ার কথা ভাবা ঠিক হবে না। পরিস্কার ব্যাখ্যা দেননি। শুধু বলেছেন, ‘আগামী কয়েক বছর আসলে আমাদের যে কারও কোচ হওয়া বেশ কঠিন। চিন্তা করাটাও কঠিন।’
সালাউদ্দিন মনে করেন, তার জাতীয় দলের হেড কোচ হওয়ায় একটি বিশেষ বাধা আছে। কি সেই বাধা? ভাবছেন জটিল ও বড়সড় কিছু বুঝি! নাহ, বিষয়টা তেমন নয়। কারণ শুনলে হয়তো অনেকে অবাকই হবেন। এ মুহূর্তে তার তিন প্রিয় শিষ্য-সাকিব, তামিম আর মুশফিকই জাতীয় দলের হেড কোচ হবার পেছনে বাধা।
সালাউদ্দিনের পরিষ্কার ব্যাখ্যা, ‘আসলে সাকিব, তামিম ও মুশফিকের সাথে আমার সম্পর্কটা অনেক বেশি নিবিড়। ওরা দলে থাকা অবস্থায় আমি কোচ হলে কথা হতেই পারে। তাই সাকিব , তামিম ও মুশফিক যতদিন খেলবে, ততদিন আমার কোচ হওয়া কঠিন। আমি তা চাইও না। সম্পর্ক খুব বেশি ক্লোজ। আমি মনে করি না, ওরা দলে থাকা অবস্থায় আমার হেড কোচ হওয়াটা আমার জন্য এবং দলের জন্য ভালো কিছু হবে। এরা যখন অবসর নেবে, তখন আমি চিন্তা করবো। যেহেতু হেড কোচ অনেক বড় ব্যাপার। আমি চাইলাম আর হয়ে গেলাম বিষয়টা তেমন নয়। জাতীয় দল চালানো অনেক গর্বেরও ব্যাপার। সেই সাথে সুদৃঢ় ও শক্ত ব্যক্তিত্বও লাগবে।’
সালাউদ্দিন যোগ করেন, ‘আমার এ মুহূর্তে মনে হয় সাকিব, তামিম ও মুশফিকের সাথে যে সম্পর্ক ও আমার ব্যক্তিত্ব এমন যে, জাতীয় দলের হেড কোচের সাথে মানানসই না ব্যাপারটা। ঠিক যায় না। পরবর্তী জেনারেশনের সাথে হয়তো সেই সমস্যাটা থাকবে না। তাই তখন চিন্তা করা যাবে। এখন না।’
এছাড়া কোচ সালাউদ্দীনের শেষ উপলব্ধি, ‘আমার আরও অনেক কিছু শেখার বাকি আছে। তখন ভেবে দেখবো, আমি ঐ পদের জন্য কতটা উপযুক্ত। তবে ইচ্ছে তো অবশ্যই আছে।’
খবর : জাগোনিউজ’র।
খেলা