বাসিংথুয়াই মার্মা
কত আগে পার হয়ে গিয়েছে আমাদের দিনগুলো। আমরা চেষ্টা করেও পারিনি নিজেদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে। আপন করে নিতে, এক হয়ে যেতে। এ ব্যর্থতা শুধু আমাদের নয়, সময়েরও। তাদের বাড়িতে দু’দিন থেকে ফেরার পর দুজনের মধ্যে অনেকদিন ধরে দেখা নেই। হয়তোবা দেখা করা কিংবা সাক্ষাৎ করার ব্যাপারে আমরা দুজনই প্রয়োজন অনুভব করেনি। হয়তোবা অনুভব করেছি, কেউ কাউকে বলতে পারিনি। খুব সম্ভব ১৫/২০ দিন পর ফোন করলো সে আমাকে।
ফোনে জিজ্ঞেস করলো, কেমন লাগলো আমাদের গ্রাম? আমরা ছোটবেলায় এ গ্রামেই বড় হয়েছি। ফুল আর পাখির সাথে মিতালি করে রুপালি নদীর কলকাকলিতে শৈশব পার করেছি।
আমি বললাম, অপূর্ব সুন্দর তোমাদের গ্রাম। বললো, যদি সময়-সুযোগ থাকে আগামীতে আবার নিয়ে যাবে তাদের বাড়িতে। আমাদের দুজনের সেই সময় আর সুযোগ কোনোটাই হয়ে ওঠেনি আর। আমরা বুঝতে পারিনি সময় ও সুযোগ আমাদের বিপরীতের দিকে ধাবমান হচ্ছে।
কোনো এক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার সাথে দেখা করতে গেলাম আমি। সুন্দর হেসে বললো সে, কেমন আছ? চলো, কেনটাকিতে কফি খাই। আমার হৃদয়ের কম্পন ধরেছিল তখন। পকেটে মাত্র ১০০ টাকার একটি নোট নিয়ে কেনটাকিতে কফি খেতে যাবো, বান্ধবীকে নিয়ে! আমার ইতস্তত করা চেহারা দেখে সে বলল, কি ভাবছ? চল, তোমার ভাবতে হবে না। জানি, তোমার কি সমস্যা।
কফির বিল আমি দেবো।
চেহারা দেখেই সে বলে দিতে পারতো আজ আমার মনখারাপ নাকি ভালো। কেনটাকি গেলাম। ফেনা ওঠা কফি, আলো-আঁধারি পরিবেশ। চারদিকে বসা মেডিকেল স্টুডেন্টরা। কমবেশি জোড়া-জোড়া। আমরাও জোড়া। তবে দুজনের মন এখনও নিজেদের কাছে লুকানো।
আমরা খুলে বলতে পারিনি নিজেদের কথা একে অপরকে। আমিও পরিনি তাকে, সেও পারেনি আমাকে। অন্যদের দেখে আমাদের মনের অবস্থা একটু অন্যরকম হয়ে যেত। আলাপ হতো, কথা হতো। কেউ কারোর মনে স্পর্শ করার সাহস হয়নি আমাদের।
কফিবিল সে-ই পরিশোধ করছিল সেদিন। আমি যতবার কেনটাকির সামনে দিয়ে গেছি, ততবার সেই কফিকাহিনি আমাকে আঁকড়ে ধরেছে।
এ যেন না বলা প্রেম। লুক্কায়িত মনের যন্ত্রণা। ধুলোমাখা মেট্রোপলিটন প্রেম। আমরা আমাদের সেই যৌথ আঙিনায় পৌঁছাতে পারিনি, পৌঁছেছি অন্য জগতে।