জাতিসংঘ পার্ক এখন ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যান’, উদ্বোধন করলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা

জুলাই স্মৃতি উদ্যান । ছবি-সংগৃহীত।

সুপ্রভাত ডেস্ক »

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাগরুক রাখতে সরকারি সিদ্ধান্তে প্রায় ৬০ বছর বয়সী চট্টগ্রামের নগরীর পাঁচলাইশে অবস্থিত ‘জাতিসংঘ পার্ক’টির নতুন নাম হয়েছে ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যান’।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যানের’ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

জুলাই স্মৃতি উদ্যান উদ্বোধন শেষে  উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে যেন আর কখনোই ফ্যাসিবাদ ফেরত আসতে না পারে, আগামী দিনের প্রজন্ম যেন এ উদ্যানে এসে বা উড়াল সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের কথা মনে রাখতে পারেন, তাদের ত্যাগের কথা মনে রাখতে পারেন সেই জন্যই মূলত উড়াল সেতু ও উদ্যানের উদ্বোধন।

যারা অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, সাড়ে ১৫ বছরের অন্যায়ের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করেছেন জীবন দিয়েছেন তাদেরও একই সঙ্গে স্মরণ করছি।

এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, শহীদদের নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকবে না। শহীদরা শহীদ। শহীদদের তালিকা দেওয়া থাকবে। শহীদদের সম্মান দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দৃশ্যমান করার কাজ মেয়র সাহেবরা করবেন। আন্ডারপাসও দরকার।

তিনি বলেন, উদ্যান জায়গা সবার জন্য উন্মুক্ত, কোনো গোষ্ঠীর ব্যবহারের জন্য না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় থাকা যেন মানুষ যেতে পারে সেই কাজগুলো আমরা চেষ্টা করছি। ইনশাআল্লাহ সবার সহযোগিতায় এটা বাস্তবায়িত হবে। বড় বিষয় হচ্ছে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা। এটি আমাদের নজরে আছে। জলাবদ্ধতা থেকে মানুষ মুক্তি পায় সেই চেষ্টা হচ্ছে। মেয়র, সিডিএ, ডিসি সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ হচ্ছে।

চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, পাঁচলাইশে ঐতিহ্যবাহী পার্ক, আমরা একসময় জাতিসংঘ পার্ক নামে চিনতাম। শৈশব এখানে কেটেছে। এটি নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে। আমি মনে করি এটার দায়িত্ব চসিক, সিডিও, জেলাপ্রশাসন, আমাদের নিতে হবে। একসময় আমাদের সমন্বয় ছিল না।  এখন একসাথে মিলে কাজ করছি। একসাথে মিলে চট্টগ্রামকে সাজাতে চাই। সব কিছু জনগণের জন্য আমরা করতে চাই। পতেঙ্গাকে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র করতে চাই। সময় লাগবে। আমরা আশা করছি, আমাদের মধ্যে যে সমন্বয় আছে এটার মাধ্যমে কাজ করতে পারলে চট্টগ্রামকে ক্লিন ও গ্রিন সিটি করতে পারবো।

জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, যে চেতনা নিয়ে আমাদের এই জুলাই অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের নয়জন বীর শহীদ প্রাণ দিয়েছেন, নতুন একটি গণতান্ত্রিক ইতিহাস লিখেছেন তাদের সেই চেতনা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারি সরকার সেই কাজ করছে। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। যেসব পার্ক অবৈধ দখলদারদের আওতায় রয়েছে তা উদ্ধার করবো। ইতিমধ্যে ডিসি পার্কের ১৯৪ একর জায়গা মাদকের আস্তানা থেকে রক্ষা করেছি। পতেঙ্গা মাঝখানে জৌলুস হারিয়েছিল। সেই জৌলুস ফিরিয়ে দিতে সিডিএ, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সমন্বিত প্রচেষ্টা চলছে।

এর আগে উপদেষ্টা পতেঙ্গায় শহীদ ওয়াসিম আকরাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

জানা গেছে, নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় ১৯৬৪ সালে ২ দশমিক ১৭ একর জমিতে পার্কটি নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পার্কটি তৎকালীন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছিল। ২০০২ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাব অনুসারে এর নামকরণ করা হয় ‘জাতিসংঘ পার্ক’।

২০১২ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ওই পার্কে সুইমিং পুল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। পার্কে নিয়মিত যাতায়াতকারী জনসাধারণ এতে বিরক্তি প্রকাশ করেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগও এর বিরোধিতা করে। এ নিয়ে টানাপড়েনে তখন থেকেই কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল পার্কটি।

২০১৭ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পার্কটির উন্নয়নে ‘পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প নেয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১১ কোটি ৭০ লাখ ১২ হাজার টাকা, পরবর্তীতে যা বেড়ে ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

নতুন করে নির্মিত পার্কটিতে সবুজকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এছাড়াও আছে দৃষ্টিনন্দন সীমানা প্রাচীর ও প্রবেশপথ। দীর্ঘ ওয়াকওয়ে, বসার সিট, শিশুদের জন্য খেলাধুলা এবং শরীরচর্চার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম।