সাজেকে বেড়াতে যাওয়া কয়েকশ পর্যটক আটকা

বাঘাইছড়িতে পানিবন্দী ২ হাজার মানুষ। জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বেড়েছে উৎপাদন

সাজেকে আটকা পর্যটক। ছবি: সুপ্রভাত

ফজলে এলাহী, রাঙামাটি »

গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ির নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ২ হাজার মানুষ। আয়তনে দেশের সবচে বড় উপজেলায় পাহাড়ী ঢলের কারণে কাচালং নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সদর, ববারবিন্দুঘাট, লাইল্যাঘোনা, মাস্টারপাড়া, উলুছড়ি, এফব্লক, মুসলিম ব্লক, রূপকারি, পুরাতন মারিশ্যা,বাঘাইহাটসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত ২ হাজার মানুষ।

এদিকে বাঘাইহাটে সড়কের উপর পানি উঠার কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পর্যটন উপত্যকা সাজেক। ফলে সেখানে বেড়াতে যাওয়া কয়েকশ পর্যটক আটকে পড়েছেন।

সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিতে বাঘাইহাটে পানি উঠায় সাজেকে অবস্থানরত সকল পর্যটক সেখানে আটকা আছে। তবে তারা সুস্থ আছেন। বৃষ্টি কমলে কয়েকঘন্টার মধ্যে আশা করছি পানি নেমে যাবে। যারপর তারা নিজ নিজ গন্তবে ফিরতে পারবেন।

মঙ্গলবার (২ জুন) সকালে বাঘাইছড়ি-বাঘাইহাট সড়ক উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সড়ক তলিয়ে যায়। ফলে সাজেকে ছোট বড় মিলে ১২৫ গাড়ির পর্যটক আটকা পড়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাজেক কটেজ মালিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিজয় ত্রিপুরা।

তিনি আরও জানান, গতকাল যেসব গাড়ি এসেছে তাদের সবাই সাজেকে অবস্থান করছে। পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে আজকে গাড়ি চলাচল করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে সকালে খাগড়াছড়ি থেকেও কোন গাড়ি সাজেকে প্রবেশ করতেও পারবে না। যারা আছেন তাদের কোন রুম ভাড়া লাগবে না। তারা শুধু মাত্র পানির খরচ দিলেই হবে।

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি নির্বাহী অফিসার শিরিন আক্তার জানান, বাঘাইছড়িতে টানা ভারী বর্ষণের ফলে নি¤œঅঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যাতে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানি বন্দি রয়েছে। উপজেলায় ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হলেও এখনো কেউ আসেনি। আর বাঘাইহাট সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সাজেকে পর্যটক আটকা পড়েছে। পানি না সড়া পর্যন্ত কেউ বের হতে পারবে না।

এদিকে টানা কয়েকদিন বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই কর্ণফুলি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে।  মঙ্গলবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রের ৫ টি ইউনিট এর মধ্যে ৪ টি ইউনিট হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৬৪ মেগাওয়াট।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের মঙ্গলবার সকালে জানান , টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মঙ্গলবার  সকাল ৯ টা পর্যন্ত কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন হয়েছে ১ ৬৪ মেগাওয়াট।  এর মধ্যে ১ নং ও ২ নং ইউনিট হতে ৪২ মেগাওয়াট করে ৮৪ মেগাওয়াট এবং ৪ নং ও ৫ নং ইউনিট হতে ৪০ মেগাওয়াট করে ৮০ মেগাওয়াট সহ সর্বমোট ১ শত ৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। যেটি চলতি বছরে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সর্বাধিক উৎপাদন। পানির পরিমাণ যদি বাড়তে থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বরত সূত্র নিশ্চিত করেছে , বছরের এই সময় কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ রুলকার্ভ অনুযায়ী ৮৪দশমিক ১৬ ফুট এমএসএল থাকার কথা থাকলেও মঙ্গলবার কাপ্তাই হ্রদে পানি পরিমাণ রয়েছে রুলকার্ভ অনুযায়ী ৮৩ দশমিক ৬৯ ফুট মীন সি লেভেল। যা গত কয়েকদিনের মধ্যে সর্বোচ্চ পানির লেভেল। তবে কাপ্তাই হ্রদের পানির ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফুট মীন সি লেভেল অবধি।

অন্যদিকে টানা বৃষ্টির কারণে যেকোন অনাকাংখিত পরিস্থিতি এড়াতে নিজেদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট সবগুলো বিভাগের সাথে সমন্বয় সভা করেছেন,অন্তত ২৬৭ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।