দুর্বল হয়ে ডান দিকে বাঁক নিচ্ছে ঝড়টি
বাংলাদেশ উপকূলে বৃষ্টি ঝরাবে
ভূঁইয়া নজরুল »
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আগেভাগে কিছু বলা যায় না। বঙ্গোপসাগর ফানেল আকৃতির হওয়ায় ঘূণিঝড়ের পূর্বাভাসের সমীকরণ মেলানো আরও জটিল। আর এই জটিলতার কারণে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বিগত কয়েক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করে পূর্বাভাস দিয়ে আসছে এবং শেষ পর্যন্ত মিলছেও। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর ও উইন্ডি সফটওয়্যারসহ অনেক মডেলকে ভুল প্রমাণ করে ভারতের বিশাখাপত্তম উপকূলের কাছে এসে ডান দিকে টার্ন নিচ্ছে ‘অশনি’। আর এতে তা সোজা বাংলাদেশের সাতক্ষীরা-খুলনা উপকূলের দিকে ধাবিত হওয়ার কথা। কিন্তু শক্তি হারিয়ে ফেলে তা ভুবনেশ্বরের কাছে এসেই দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার ভোরে বিশাখাপত্তম উপকূলে এসে পৌঁছানোর পর তা ডান দিকে টার্ন নিয়ে সোজা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার কথা। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরও এমন গতিপথ দেখিয়েছে অশনির। ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি হারিয়ে মঙ্গলবার মধ্যরাতের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় থেকে ঘূর্ণিঝড় ঝড়ে রূপ নিতে পারে। দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে এবং বৃহস্পতিবার ভুবনেশ্বর উপকূলে আসার আগেই তা নিম্নচাপে পরিণত হয়ে সাগরে বিলীন হতে পারে। এবিষয়ে কথা হয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যেহেতু মঙ্গলবার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে ডান দিকে বাঁক নেবে তখন সংকেত বাড়িয়ে তিন নম্বর করা হতে পারে। পরবর্তীতে ঝড়টি সাগরে যে কয়েকদিন থাকবে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত বহাল রাখা হতে পারে।’
বাংলাদেশ উপকূলে বৃষ্টি ঝরাবে ‘অশনি’
কিন্তু ডান দিকে বাঁক নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে বজলুর রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশ উপকূল পর্যন্ত আসার শক্তি থাকবে না। তবে এর প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চল সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট উপকূলীয় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া চট্টগ্রামসহ দেশের সমগ্র উপকূলীয় বৃষ্টি হতে পারে।’
এবিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর পতেঙ্গা কার্যালয়ের বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘ঝড়টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সে হিসেবে বিশাখাপত্তম ও ভুবনেশ্বরের মধ্যবর্তী এলাকায় তা বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা। তবে এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে। ’
বৃষ্টি কতোদিন থাকতে পারে জানতে চাইলে বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী নিম্নচাপ পর্যন্ত যতোদিন থাকবে ততোদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে।’ এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সোমবার সকালের পর থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে নগরীতে। এরমধ্যে বিকেলের পর আবার মুষলধারে বৃষ্টিও হয়েছে। আকাশে প্রচুর মেঘ।
ব্যতিক্রমী ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’
৭ মে ভারত মহাসাগরের আন্দামান সাগরে সৃষ্ট হওয়া লঘুচাপটি দ্রুত সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপের পর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। কিন্তু প্রথম দিকে যতো বড় আয়তন নিয়ে তা তৈরি হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত তা আর থাকেনি। আর একারণে এর পূর্বাভাস গতিপথ নিয়ে আবহাওয়াবিদদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘ঝড়টি যেমন ভাবা হয়েছিল তেমন হয়নি। একারণে এর গতিপথ আবহাওয়াবিষয়ক একেক মডেলে একেক রকম আসছে। মঙ্গলবার সকালে হয়তো চূড়ান্তভাবে বলা যাবে তা কোনদিকে যাচ্ছে।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১০ নম্বর বিশেষ বুলেটিনের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ১০৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা থেকে ৯৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের উপকূলীয় এলাকার বন্দরগুলোকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসাথে মাছ ধরার সকল নৌকা ও ট্রলারসমূহে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।