সুপ্রভাত ডেস্ক »
গোটা দলের রান ৩১৪। এক জুটিতেই রান অর্ধেকের বেশি! ১৫৯ রানের সেই জুটিকে থামিয়ে দেওয়া যেত অনেক আগেই, যদি কাজে লাগানো যেত ক্যাচ-স্টাম্পিংয়ের সুযোগগুলি। কিন্তু ফিল্ডিংয়ে ভুলের সেই ভূত যথারীতি তাড়া করল বাংলাদেশকে। সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভালো একটি দিন কাটানোর পর তাই সঙ্গী একটু আফসোস, দিনটা তো ভালো হতে পারত আরও!
মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনে প্রথম ইনিংসে ভারত অলআউট ৩১৪ রানে। প্রথম ইনিংসে তাদের লিড ৮৭ রানের। ভারতীয় ইনিংসের মেরুদ- রিশাভ পান্ত ও শ্রেয়াস আইয়ারের জুটি। চাপের মধ্যে পঞ্চম উইকেটে পাল্টা আক্রমণে ১৫৯ রানের জুটি গড়েন দুজন ১৮২ বলে। অথচ পান্ত আউট হতে পারেন ১১ রানে। কিংবা ৫৯ রানে। শ্রেয়াসের ইনিংস থামতে পারত ১৫ রানে। অথবা ২১ রানে।
বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারেনি কোনো সুযোগই। শেষ পর্যন্ত পান্তের ইনিংস অবশ্য শেষ হয় সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশায়। নিজের মতো ব্যাটিংয়েই ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৯৩ রান করেন তিনি ১০৪ বলে। টেস্টে তার সেঞ্চুরি ৫টি, কিন্তু ৯০ ছুঁয়ে সেঞ্চুরির আগে কাটা পড়লেন ৬ বার।
যথেষ্ট আগ্রাসী ছিল শ্রেয়াসের ব্যাটও। ১০ চার ও ২ ছক্কায় তার রান ১০৫ বলে ৮৭। আগের টেস্টে চট্টগ্রামেও কয়েক দফায় বেঁচে গিয়ে তিনি করেন ৮৪ রান।
বাংলাদেশের হয়ে দিনজুড়ে অসাধারণ বোলিং করে তাইজুল নেন ৪ উইকেট। কাঁধের চোট কাটিয়ে সাকিবও বল হাতে ফেরেন চেনা রূপে। বাংলাদেশ অধিনায়কের শিকার ৭৯ রানে ৪ উইকেট। শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ ওভার খেলে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ।
এমনিতে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপকে ৩১৪ রানে আটকে রাখা মানে দারুণ কিছুই। কিন্তু বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে এতটাই কম রানে গুটিয়ে গেছে যে ব্যবধান এখনও ৮০ রানের। উইকেটে বাউন্স অসমান, টার্ন তো আছেই। চতুর্থ ইনিংসে ২০০-২৫০ রানের লক্ষ্যও খুব কঠিন হওয়ার কথা। কিন্তু এ উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং অতটা পথ পাড়ি দিতে পারবে কি না, সংশয় সেখানেই।
বিনা উইকেটে ১৯ রান নিয়ে দিন শুরু করে ভারত। দিনের প্রথম বলেই সৈয়দ খালেদ আহমেদের দুর্দান্ত ডেলিভারি কাঁপিয়ে দেয় লোকেশ রাহুলকে। খালেদ অবশ্য যথারীতি এরপর ছিলেন অধারাবাহিক। তবে আরেকপ্রান্তে তাইজুল আঁটসাঁট বোলিংয়ে আটকে দেন রাহুল ও শুবমান গিলকে। সাফল্যও মেলে দ্রুতই। ভারতের দুই ওপেনারকেই ফেরান এই বাঁহাতি স্পিনার।
তাইজুলের হাত ধরে লাঞ্চের আগে আরেকটি বড় উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। আগের টেস্টে ৯০ ও ১০২ রানের ইনিংস খেলা চেতেশ্বর পুজারা এবার থামেন স্রেফ ২৪ রানে। সিলি মিড অনে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মুমিনুল হক।
প্রথম সেশনে আরও উইকেট পেতে পারত বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজের করা লাঞ্চের ঠিক আগের ওভারে একটুর জন্য পান্তর ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন। ওভারের শেষ বলে হাতছাড়া হয় বিরাট কোহলিকে রান আউট করার সুযোগ।
ভীষণ সাবধানী ব্যাটিংয়ে ৬৫ বলে ১৮ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যান কোহলি। বিরতির পর প্রথম ওভারে তাইজুলকে দারুণ এক শটে চার মেরে তিনি ইঙ্গিত দেন ভিন্ন কিছুর। কিন্তু অফ স্টাম্প ঘেঁষা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে তাকে থামান তাসকিন আহমেদ।
বাংলাদেশে দুই বারের সফরে টেস্টে চার ইনিংস খেলে কোহলির রান ১৪, ১, ১৯*, ও ২৪। ভারতের রান ৪ উইকেটে ৯৪, বাংলাদেশ তখন লিডের আশা করতেই পারে!
কিন্তু পরের জুটিতেই সেই আশা মিলিয়ে যায়। নিজেদের সুযোগ হাতছাড়া আর পান্ত-শ্রেয়াসের দুর্দান্ত সব শটে রান বাড়তে থাকে তরতরিয়ে।
শ্রেয়াস প্রথম সুযোগ দেন ১৫ রানে। তাসকিনের বাড়তি বাউন্সের বল তার ব্যাট ছুঁয়ে ছুটে আসে গুলির বেগে। গালিতে মিরাজ ডানদিকে লাফিয়ে হাতে ফেরতে পারলেও মুঠোয় জমাতে পারেননি। উল্টো নাকে আঘাত পেয়ে মাঠের বাইরে থাকে কিছুক্ষণের জন্য। খবর বিডিনিউজ।
পরের সুযোগটি অনেক সহজ। সাকিবের ফ্লাইটে বিভ্রান্ত শ্রেয়াস ক্রিজের অনেক বাইরে চলে যান। কিন্তু কিপার নুরুল হাসান সোহান বল জমাতে পারেননি গ্লাভসেই। ২১ রানে জীবন পেয়ে তিন বলের মধ্যে দুটি চার মেরে দেন শ্রেয়াস।
অন্যপ্রান্তে পান্ত তখন বিধ্বংসী রূপে। পেস-স্পিনে ব্যাট চালাতে থাকেন সমান গতিতে। তাইজুলতে উড়িয়ে দেন ১০২ মিটার লম্বা ছক্কায়। ফিফটি স্পর্শ করেন ৪৯ বলে। পরে ৫০ থেকে ৮০ পার হতেই তার ব্যাট থেকে ছক্কা আসে আরও ৪টি। এর প্রথমটি হতে পারত ক্যাচ। কিন্তু সীমানায় তালগোল পাকান মুশফিকুর রহিম।
জীবন পেয়েও রানের গতি না কমিয়ে শ্রেয়াস ফিফটি করে ফেলেন ৬০ বলে। দ্বিতীয় সেশনে আর কোনো উইকেটই পড়েনি। ২৫ ওভারে ১৪০ রান ওঠে এই সেশনে।
দুজনের সেঞ্চুরিই যখন মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার, বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ফেরাতে পারে দুজনকেই। মিরাজের জোরের ওপর করা ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন পান্ত। সাকিবের ফ্লাইট বুঝতে না পেরে সুইপ করার চেস্টায় এলবিডিব্লউ হন শ্রেয়াস।
এ দুই উইকেটের ফাঁকে সাকিবকে ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন আকসার প্যাটেল। পরে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও উমেশ যাদবদের বেশিক্ষণ টিকতে দেননি সাকিব-তাইজুলরা।
শেষ সেশনে ৬১ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায় ভারত। বাংলাদেশের দুই ওপেনার এরপর শেষ বিকেলের চ্যালেঞ্জেও উতরে যান। সব মিলিয়ে, শেষটুকু দারুণ স্বস্তির। তবে গোটা দিনে পেছনে ফিরে তাকালে মোচড় দিয়ে ওঠে ওই আফসোসটুকুই। পান্ত-শ্রেয়াস যদি জীবন না পেতেন!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২২৭
ভারত ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১৯/০) ৮৬.৩ ওভারে ৩১৪ (রাহুল ১০, গিল ২০, পুজারা ২৪, কোহলি ২৪, পান্ত ৯৩, শ্রেয়াস ৮৭, আকসার ৪, অশ্বিন ১২, উনাদকাট ১৪*, উমেশ ১৪, সিরাজ ৭; তাসকিন ১৫-২-৫৮-১, সাকিব ১৯.৩-৩-৭৯-৪, খালেদ ১০-১-৪১-০, তাইজুল ২৫-৩-৭৪-৪, মিরাজ ১৭-২-৬১-১)।
বাংলাদশ ২য় ইনিংস: ৬ ওভারে ৭/০ (শান্ত ৫*, জাকির ২*; উমেশ ২-১-৪-০, অশ্বিন ৩-১-৩-০, উনাদকাট ১-১-০-০)