সুপ্রভাত ডেস্ক »
স্কটল্যান্ডের কোচ শেন বার্গার তাহলে সঠিকটাই বলেছিলেন। প্রথম পর্বের খেলায় তারা বাংলাদেশকে পাপুয়া নিউ গিনি ও ওমানের চেয়ে খুব একটা ওপরে দেখতে পাচ্ছেন না! তার কথাটা মাঠেই প্রমাণ করে দিলো বাংলাদেশ! শক্তি-সামর্থ্যে এগিয়ে থেকেও স্কটল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশ হেরে গেছে ৬ রানে! তাতে পঁচা শামুকে পা কেটে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছে মাহমুদউল্লাহর দল!
স্কটিশ বোলিংয়ে শুরুতেই খেই হারায় বাংলাদেশের ব্যাটিং। মিডউইকেটে ইনিংসের দ্বিতীয় বলে চার মেরে পরের ওভারে শেষ রক্ষা হয়নি সৌম্যর। ডেভির বলে ঠিক একই জায়গায় মেরে খেলতে গেলেও ততক্ষণে সেখানে দাঁড়িয়ে গেছেন এক ফিল্ডার! ফাঁদে পড়ে সৌম্য বিদায় নেন ৫ রান করে। শুরুর ধাক্কা সামলানোর বদলে উইকেট বিলিয়ে দেন ওপেনার লিটন দাসও। উইকেট ছেড়ে এসে মিড অফে ক্যাচ তুলে দেন ব্র্যাড হুইলের বলে।
দুই ওপেনারের বিদায়ের চাপটা গিয়ে পড়ে সাকিব-মুশফিকের ওপরে। পাওয়ার প্লেতে কাঙ্ক্ষিতভাবে রানের জোগান দিতে পারেননি তারা। পাশাপশি স্কটিশ বোলিংয়ে রান রেটের চাপও বাড়তে থাকে প্রতিনিয়ত। কিন্তু মুশফিক হাত খোলার চেষ্টায় ছিলেন। শ্লথ গতিতে সাকিব তাকে সঙ্গ দিলেও মেরে খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন ১১.১ ওভারে। লেগ স্পিনার গ্রেভসের বলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ম্যাকলিওডের ক্যাচে পরিণত হন। তার বিদায়ের পর মুশফিকও থিতু হননি। লেগ স্পিনার গ্রেভসের ঘূর্ণিতেই তিনি ফেরেন ৩৮ রানে! স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন মুশফিক। মূলত এখানেই ছিটকে যায় বাংলাদেশ।
ভীষণ বিপদে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশকে তখনও আশা দেখাচ্ছিলেন আফিফ ও মাহমুদউল্লাহ। চাপ মুক্ত করতে সফলও হন আফিফ। কিন্তু চাপের কাছেই মাথা নত করেন তরুণ এই ব্যাটার। ওয়াটের বলে ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ১২ বলে ১৮ রানে ফিরলে দিশা হারায় মাহমুদউল্লাহর দল। শট খেলার তাড়ায় টি টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও ২২ বলে ২৩ রানের বেশি করতে পারেননি। অভিজ্ঞদের বিদায়ে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে করতে পারে ১৩৪ রান।
অথচ মেহেদী-সাকিবের ঘূর্ণিতে এক পর্যায়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল স্কটল্যান্ড। ৫৩ রানে স্কটল্যান্ডের ৬ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু টি-টোয়েন্টি এমনই এক ফরম্যাট একজন দাঁড়িয়ে গেলে মুহূর্তেই পাল্টে যায় ম্যাচ। যেটা করে দেখান লেগ স্পিনার হিসেবে সুযোগ পাওয়া ক্রিস গ্রেভস! তার শেষের ঝড়-ই সমৃদ্ধ স্কোরবোর্ড পাইয়ে দিয়েছে স্কটিশদের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশকে তারা ছুঁড়ে দেয় ১৪১ রান।
৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ক্রিস গ্রেভস ও মার্ক ওয়াট মিলেই জানান দেন এখনও রসদ শেষ হয়ে যায়নি স্কটল্যান্ডের। ৩৪ বলে ৫১ রানই উঠে এই জুটিতে! তাসকিনের বলে এই জুটি ভাঙে মার্ক ওয়াটের বিদায়ে। ওয়াট ১৭ বলে ২২ রানে ফেরেন। ১৯.২ ওভারে গ্রেভস বিদায় নেন স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করেই। উড়িয়ে মারতে গিয়ে ২৮ বলে ৪৫ রান করা এই ব্যাটার শিকার হন মোস্তাফিজের। যার ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছয়। পরের বলে কাটার মাস্টার জশ ডেভিকে ফেরালেও শারিফের ছক্কায় স্কোরটা হয়ে যায় চ্যালেঞ্জিং। ৯ উইকেটে স্কটল্যান্ড করে ১৪০ রান। যার খেসারত দিতে হয়েছে ম্যাচ হেরে!
অফস্পিনার মেহেদী ১৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ১৭ রানে দুটি নেন সাকিব আল হাসান। মোস্তাফিজ দুটি নিলেও রান দিয়েছেন ৩২টি। একটি করে নেন সাইফউদ্দিন ও তাসকিন আহমেদ।
চূড়ায় সাকিব, সঙ্গে অনন্য অলরাউন্ড কীর্তি
অবশেষে সেই মাইলফলকের দেখা পেলেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপে দলের প্রথম ম্যাচেই এক ওভারে নিলেন দুই উইকেট।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে রোববার জোড়া শিকারে সাকিব ছাড়িয়ে যান লাসিথ মালিঙ্গাকে। টি-টোয়েন্টির সফলতম বোলার এখন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। ১০৬ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা সাকিব এই ম্যাচেও প্রথম দুই ওভার ছিলেন উইকেটশূন্য। নিজের তৃতীয় ওভারে রিচি বেরিংটনকে ফিরিয়ে স্পর্শ করেন মালিঙ্গার ১০৭ উইকেট। সীমানায় দারুণ ক্যাচ নেন আফিফ হোসেন। এক বল পরই তিনি ছাড়িয়ে যান মালিঙ্গাকে। এবার সীমানায় লিটন দাসের হাতে সহজ ক্যাচ দেন মাইকেল লিস্ক। ৮৪ ম্যাচ খেলে ১০৭ উইকেট নিয়ে শেষ হয়েছে মালিঙ্গার ক্যারিয়ার। সাকিব তাকে ছাড়িয়ে গেলেন ৮৯ ম্যাচে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে উইকেটের সেঞ্চুরি আছে কেবল এই দুজনেরই। ৯৯ উইকেট নিয়ে শত উইকেটের অপেক্ষায় নিউ জিল্যান্ডের টিম সাউদি। দ্বিতীয় উইকেটে আরও একটি মাইলফলকে নাম লেখা হয়ে যায় সাকিবের। গড়েন অনন্য একটি কীর্তিও।
স্বদেশ