সাকিববিহীন অধ্যায় শুরুর অপেক্ষায় বাংলাদেশ

সুপ্রভাত বিনোদন ডেস্ক »

সাকিব আল হাসানকে প্রথম দেখার দিনটা এখনো ভুলতে পারেন না হাবিবুল বাশার। হাবিবুল তখন জাতীয় দলের অধিনায়ক। সাকিব কেবলই এসেছেন বিসিবির আওতায়। বিসিবির অফিস তখন গুলশানের নাভানা টাওয়ারে। কোনো কাজে হাবিবুল গিয়েছিলেন বিসিবিতে। সাকিবদের ব্যাচ তখন বিসিবির অফিসেই।
পরে কি হলো শুনুন হাবিবুলের কণ্ঠে, ‘২০০৬ সালে নাভানা টাওয়ারে প্রথম সাকিবকে দেখেছি। কতগুলো তরুণ ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঢুকছি। সালাম দিলো সবাই (হাসি)। তখন তো ঘরোয়া ক্রিকেটে তেমন হতো না। কিন্তু শুনেছিলাম যে ওর (সাকিব) সঙ্গে কতগুলো খেলোয়াড় খুব ভালো খেলছে আর কি।’
‘তখন আমাদের দলটা পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়েছে কেবল। সাকিব, মুশফিক, তামিম আসলো। আমরা কিছু সিনিয়র খেলোয়াড় ছিলাম একসঙ্গে। ওরা আসার পর পুরো দলের খেলার ধরণ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। নিশ্চিতভাবেই তারা মাঠেই নামতো জয়ের জন্য। সাকিবের আগমন দলে ভারসাম্য এনে দিয়েছিল। ব্যাটিং হোক বা বোলিং।’ – যোগ করেন হাবিবুল।
হাবিবুলের হাত ধরেই ২০০৭ সালে টেস্ট ক্রিকেটে পদার্পণ সাকিবের। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচ। এরপর এক্সপ্রেস গতিতে সাকিবের ছুটে চলা। কখনো ব্যাট হাতে ঝলমলে পারফরম্যান্স তো কখনো বল হাতে স্পিন বিষ। আবার কখনো অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সে সাকিব ডানা মেলে উড়তে থাকেন। পারফরম্যান্সের সুবাদে হয়ে যান বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয়। নিজেকে শুধু লাল-সবুজের জার্সিতেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। ২২ গজে নজরকাড়া পারফরম্যান্স দিয়ে হয়েছেন বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। হয়েছেন বাংলাদেশের ধ্রুবতারা, বিশ্ব ক্রিকেটের দূত।
সেই সাকিবকে ছাড়া এখন নতুন করে পথচলা শুরুর অপেক্ষায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্ট মিরপুরে শুরু হবে আজ সকালে। এই টেস্ট দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের জার্সি তুলে রাখার কথা ছিল সাকিবের। কিন্তু পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাকিব নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশে আসার অনুমতি পাননি। ফলে স্কোয়াডে তাকে রেখেও বাদ দিতে হয়েছে নির্বাচকদের।
বিদায়ী টেস্ট ম্যাচ ঢাকায় খেলার ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রামে শুরুর পর কানপুরে ইতি টেনেছেন। ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল সাকিবের। কানপুরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে খেলেছেন ৭১ নম্বর টেস্ট।
লম্বা এ সময়ে বাংলাদেশ খেলেছে ১০২ টেস্ট। সাকিব ছিলেন না ৩১ টেস্টে। ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে পারফরম্যান্সের জন্য বাদ পড়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। ইনজুরি, স্বেচ্ছায় ছুটি নেওয়া কিংবা শাস্তির কারণে সাকিব বাংলাদেশ দলে ছিলেন না। এছাড়া ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ পরেই তাকে দেখা গেছে ২২ গজে।
সাকিব না থেকেও ম্যাচটা সাকিবময় হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সামান্যই। অথচ দুই দলেরই সুযোগ আছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার।
সাকিবের ইস্যুটি পাশ কাটিয়ে ২২ গজে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, ‘কঠিন (মানসিক অবস্থা)। সত্যি করে বললে। তবে এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, সেটা নিয়ে চিন্তা করাটা সময় নষ্ট। যত বেশি সম্ভব খেলাতে ফোকাস করছি। কারণ, খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি টেস্ট।’
সাকিবকে ছাড়া কম্বিনেশন সাজানো কঠিন হবে তা জানিয়ে শান্ত যোগ করেছেন, ‘এখনও সমস্যা হচ্ছে কম্বিনেশন মেলাতে। অস্বীকার করার কিছু নেই। এই জায়গা ঠিক করতে কিছুদিন সময় লাগবে। যে খেলোয়াড়গুলো আছে, সবার এই সামর্থ্য আছে, যার যে জায়গা থেকে ভূমিকা রাখার।’
সাকিব ছাড়াও বাংলাদেশকে নিজেদের কন্ডিশনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ মনে করেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম, ‘সাকিব না থাকলেও ওদের দলটা বেশ শক্তিশালী। অনেক যোগ্য স্পিনার আছে ওদের। কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে অবশ্যই। আর ওই চ্যালেঞ্জটা নিতে আমরা মুখিয়ে আছি। কঠিন কয়েকটা দিন অপেক্ষা করছে, চ্যালেঞ্জিং কয়েকটা দিনও। আশা করি, সিরিজটাও আমাদের জন্য রোমাঞ্চকর হবে।’
দুই দল এখন পর্যন্ত ১৪ টেস্ট মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে ১২ জয় দক্ষিণ আফ্রিকার। বাংলাদেশ কোনো ম্যাচে জয় পায়নি। তবে ড্র করেছে দুইটি। বাংলাদেশের জন্য মিরপুর ও চট্টগ্রামের টেস্ট দুটি বড় সুযোগ তাদেরকে হারানোর। কাজটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয় মোটেও।
কেননা এ বছর ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ডকেও টেস্টে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সঙ্গে পাকিস্তানের বিপেক্ষে দুটি টেস্ট ম্যাচ জিতেছে। হারের রেকর্ডও আছে। ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হার। সেসব পেছনে ফেলে নতুন উদ্যোমে লড়াই করতে পারে কিনা সেটাই দেখার।