সাঈদীর রিপ্লেসমেন্ট আজহারী!

১৬ বছর পর প্যারেডে আবার তাফসীর মাহফিল

নিজস্ব প্রতিবেদক »

ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের আয়োজনে চকবাজারের প্যারেড ময়দানে আগামী ২৭ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী তাফসীরুল কোরআন মাহফিল আবারও অনুষ্ঠিত হবে।

সময়ের হিসেবে প্রায় ১৬ বছর পর এই তাফসীর মাহফিল পুনরায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাহফিলের ছন্দ পতন ঘটে ২০০৬ সালে। বিগত জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যূত্থান তথা রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে মাহফিল করার সুযোগ আসায় আবারও মুখরিত হবে প্যারেড ময়দান। মূলত ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সঙ্গে মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ও জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্টতার কারণে এতদিন ধরে মাহফিল আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।

বিগত সরকারের আমলে নানা টানাপোড়েনে কেটেছে জামায়াতে ইসলামীর অস্তিত্ব। এ সময়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেককেই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-ে দ-িত করা হয় এবং দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।

বর্তমানে ক্ষমতার পালাবদলে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠার সুবাদে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে ইতিবাচক পথে এগুনোর সুযোগ পাচ্ছে। প্রায় ১৬ বছর পর তাফসীরুল কোরআন মাহফিলও তারই ধারাবাহিকতার একটি আয়োজন বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

তাছাড়া, এবারই প্রথম তাফসীর অনুষ্ঠিত হবে এ মাহফিলের অন্যতম বক্তা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অনুপস্থিতিতে। যিনি দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে টানা পাঁচ দিন তাফসীর মাহফিলে বয়ান করে গেছেন।

২০০৬ সাল পর্যন্ত ঐতিহাসিক এই তাফসীর মাহফিলের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন দেলাওয়ার  হোসাইন সাঈদী। ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মিজানুর রহমান আজহারী প্রধান মুফাসসীর থাকছেন এবারের মাহফিলে

চট্টগ্রামের এই তাফসীর মাহফিলে এবার আল্লামা সাঈদীর বিকল্প হিসেবে তাফসীর করবেন দেশের জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। তবে তিনি এই মাহফিলের পঞ্চম ও শেষ দিনে তাফসীর পেশ করবেন বলে জানা গেছে ।

এ প্রসঙ্গে মাহফিলের আয়োজক ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের বলেন,‘মানুষের ব্যাপক আগ্রহ, মাহফিল আয়োজনের তাগিদ থেকে আমরা আবার এ আয়োজন করেছি।  পাঁচ দিনব্যাপী মাহফিলে পাঁচজন মুফাসসীর পৃথকভাবে তাফসীর করবেন।’

তিনি বলেন, প্রথম দিন তাফসীর করবেন মাওলানা আবদুল্লাহ আল আমিন, দ্বিতীয় দিন তাফসীর করবেন মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনছারী, তৃতীয় দিন তাফসীর করবেন মাওলানা  মুফতী আমির হামজা, চতুর্থ দিন তাফসীর করবেন মাওলানা কামালুদ্দীন জাফরী এবং পঞ্চম ও শেষ দিনে প্রধান মুফাসসীর হিসেবে তাফসীর করবেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। এদিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ক ম খালিদ হোসেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। শেষ দিনে মুনাজাত পরিচালনা করবেন আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিব।

ড. মিজানুর রহমান আজহারীকে টানা পাঁচ দিনব্যাপী তাফসীরে কেন রাখা হচ্ছে না এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘এছাড়া তো আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ ওনাকে তো আমরা পাঁচদিনের জন্যে পাচ্ছি না। ওনাকে দিয়ে এরকম একটা প্র্যাকটিস আমাদের হয় নাই। ওনি এখন অনেক পপুলার। কিন্তু আমরা দেখছি, উনি একদিনের জন্যেই বিভিন মাহফিলে যাচ্ছেন। এই মাহফিলে তার বয়ানে মানুষের মধ্যে কেমন প্রতিক্রিয়া হয় সেটি বিবেচনা করে পরবর্তী মাহফিলে তাকে দুই বা তিন দিন তাফসীরের সুযোগ রাখা  হবে।’

মাহফিলের সময়সূচি

ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২৭ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় মাহফিল প্রতিদিন আসরের নামাজের পর শুরু হবে। এতে মহিলাদের জন্যও মাহফিলে অংশ নেওয়ার মতো সুব্যবস্থা থাকবে বলে জানানো হয়।

তাফসীর মাহফিলের সূচনার কথা

১৯৭৭ সালে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রাম নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলে প্রথম তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের আয়োজন করে। এক বছর পর সেখান থেকে সরিয়ে কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে এই মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এরপর এই মাহফিল আয়োজন করা হয় লালদীঘি মাঠে। ১৯৮৫ সাল থেকে প্রতি বছর চকবাজারের প্যারেড ময়দানে পাঁচ দিনব্যাপী এই মাহফিল আয়োজন করা হয়।

এতে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসতেন। অমুসলিমরাও এই মাহফিলে অংশ নিতেন বলে জানা যায়।

জানা গেছে, ২৯ বছর ধরে তাফসির মাহফিলের এ পথচলায় অন্তত পাঁচ শতধিক অমুসলিম মুসলমান হয়েছেন।

মাহফিল বন্ধের ঘটনাপ্রবাহ

২০০৬ সালের ২০ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি প্যারেড ময়দানে সর্বশেষ তাফসীর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর পরের দুই বছর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই মাহফিলের অনুমতি দেয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার তাফসির মাহফিল আয়োজনের চেষ্টা করে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ। ওই বছরের ২৯ মার্চ থেকে তাফসির মাহফিল আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু ওই দিন সরকারের নির্দেশে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) প্যারেড ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি করে। এরপর থেকে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় এই আয়োজন।