নিজস্ব প্রতিবেদক :
সুপার সাইক্লোন তকমা হারিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’। গতি হারিয়েছে এটি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল এরগতি ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে বলে ঘোষণার পর আজ মঙ্গলবার ২৬ নম্বর বুলেটিনে ২০০ তে নেমে এসেছে। আর গতি নামার সাথে সাথে এটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। তবে এখন থেকে ধীরে ধীরে এর গতি কমবে।
গতকাল থেকে আতঙ্ক ছড়ানো সুপার সাইক্লোন হঠাৎ করে চুপসে গেল কেন? আবহাওয়া অধিদপ্তদরের কর্তাদের অফিসিয়াল জবাব হচ্ছে, এটি দুর্বল হয়ে গেছে। তাই এর গতি কমেছে।
কিন্তু আবহাওয়াভিত্তিক বিভিন্ন মডেলে দেখা যায়, আজ সকাল ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের নিচের একটি বড় অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ারের দিকে চলে গেছে।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আবহাওয়াবিদ জানান, এটি সাগরে থাকতে শক্তিশালী থাকবে কিন্তু উপকূলে এলে দুর্বল হয়ে যাবে। এধরনের পূর্বাভাস ছিল আমাদের। কিন্তু উপকূলের মানুষদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে সংকেত বাড়ানো হয়েছিল।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের ২১ নম্বর বুলেটিনে ঝড়টি দুর্বল হয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। আজ সকালে এর গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার থাকলেও বিকাল তিনটার পর থেকে এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। সময় যতো গড়াবে এর গতিবেগ আরো কমবে।
অপরদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের ২৬ নম্বর বুলেটিনে সুপার সাইক্লোনের পরিবর্তে এটিকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বলেছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে এর গতিবেগ ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত রয়েছে বলা হচ্ছে। এটি আজ বিকাল তিনটায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা খেকে ৬৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাবে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও চট্টগ্রামের উপকূলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। এজন্য মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রমের সময় উপকূলীয় এলাকায় প্রচ- গতিতে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ঘটাতে পারে। এজন্য সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং এসব এলাকার পাশ্ববর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে স্বাভাবিকের চাইতে পাঁচ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এসময় এসময় এসব এলাকায় ঘন্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বঙ্গোপসাগরে এক বা একাধিক নিম্নচাপ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এসব নিম্নচাপ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনাও বলা হয়েছে। বছরের এসময়ে সাগরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে। এপ্রিল-মে ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম।
টপ নিউজ