সুপ্রভাত ডেস্ক »
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হিমশৈল এ২৩এ ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। ৩০ বছর সাগরের তলার সঙ্গে আটকে থাকার পর ক্রমান্বয়ে সরে যাচ্ছে এই বিশাল আকৃতির বরফের স্তূপ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। এ২৩এ হিমশৈল ১৯৮৬ সালে অ্যান্টার্কটিকা উপকূল থেকে বিভক্ত হয়ে যায়। অ্যান্টার্কটিকা থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর ওয়েডেল সাগরে আসে। তারপর সেখানে এটি বিশাল বরফের দ্বীপে পরিণত হয়।
এ২৩এ হিমশৈলের আয়তন প্রায় চার হাজার বর্গ কিলোমিটার। এটি এত বড় বরফের খ- যা দুটি বৃহত্তর লন্ডনের আয়তনের সমান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর থেকে এটি এতো গতিতে সরছে যে, বরফ খ-টি অ্যান্টার্কটিকা সাগরের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ২৩এ পানির উপর ভেসে থাকা অতিকায় বরফখন্ড। যা দেখতে শুধু বড় নয় এটি মনোমুগ্ধকরও বটে।
এই বরফ খ-টির আয়তন যেমন বিশাল তার পুরত্বও অনেক। এটির পুরুত্ব প্রায় ৪০০ মিটার। যদি তুলনা করা হয় তাহলে লন্ডনের সবচেয়ে উঁচু ভবন ‘লন্ডন শার্ডের’ সমান। যার উচ্চতা ৩১০ মিটার।
এ২৩এ হিমশৈল একসময় হোয়াইট কন্টিনেন্টের ফিলচনার আইস শেল্ফের অংশ ছিল। এক সময় এখানে সোভিয়েত ইউনিয়নের গবেষণা স্টেশন ছিল।
কিন্তু প্রায় ৪০ বছর পর এ২৩এ হিমশৈল সরে যাচ্ছে কেনো? এমন প্রশ্ন নিয়ে ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিকা সার্ভের রিমোট সেন্সিং বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্ড্রু ফ্লেমিং বলেন, আমি আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তাদের ধারণা, সাগরের পানির তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে এমন হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এ হিমশৈল ১৯৮৬ সালে ভেঙ্গে আলাদা হয়েছিল। কিন্তু দিন দিন তার আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই না, সরে যাওয়াও শুরু করেছে। ২০২০ সালে এটি প্রথম সরে যেতে দেখেছি।
দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে এটি সরে যাওয়া শুরু করেছে। বাতাস ও সাগরের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। ভেসে ভেসে অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপের উত্তর প্রান্ত অতিক্রম করছে। সরে যাওয়া দেখে মনে হচ্ছে, এটি অ্যান্টার্কটিকা সার্কামপোলার স্রোতে গিয়ে পড়বে। ওয়েডেল সেক্টরের বেশিরভাগ হিমশৈল দক্ষিণ আটলান্টিকের দিকে সরে যাচ্ছে। এরা ‘আইসবার্গ অ্যালি’ নামে পরিচিত।
দেখা যাচ্ছে, যত বড়ই হিমশৈল হোক না কেনো, সরে গিয়ে এবং গলে গিয়েই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ২৩এ হিমশৈলের কাছাকাছি গিয়ে তার অগ্রগতি অনুসরণ করবেন বিজ্ঞানীরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিশাল আকৃতির হিমশৈল যদি দক্ষিণ জর্জিয়ার দিকে আসে তাহলে লাখ লাখ সামুদ্রিক প্রাণী ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাদের মধ্য রয়েছে, সীল, পেঙ্গুইন ও বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক পাখি। বিশেষ করে যারা এই দ্বীপে বংশ বিস্তার করে তারা বেশি ক্ষতির শিকার হবে।
শুধু তাই না, প্রাণীদের স্বাভাবিক চলাচলের রাস্তায় বাধা তৈরি করতে পারে এই বিশাল আকৃতির হিমশৈল। তাদের বাচ্চাদের জন্য খাবার সংগ্রহ এবং তা খাওয়ানোর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই বরফখন্ড।
কিন্তু এই হিমশৈলগুলোকে শুধু বিপদের কারণ হিসেবে ভাবলে ভুল হবে। পরিবেশে এদেরও গুরুত্ব রয়েছে। কারণ এই হিমশৈল জমে থাকা ধূলিকণা গলে পড়ে সমুদ্রের খাদ্য শৃঙ্খল তৈরি করবে।
উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের ডক্টর ক্যাথরিন ওয়াকার বলেন, অনেক ভাবেই এই হিমশৈল জীবন দিয়ে থাকে। এগুলো অনেক জৈবিক কার্যকলাপের মূল বিন্দুও বটে।