সরবরাহ বাড়ায় সবজির বাজারে স্বস্তি

¦ কমেছে পেঁয়াজ-আদার দাম ¦

রাজিব শর্মা »

সরবরাহ বাড়াতেই দীর্ঘদিন ধরে অস্থির হওয়া সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। এছাড়া আমদানির প্রভাবে কমেছে পেঁয়াজ ও আদার দাম। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা বেড়েছে ব্রয়লারসহ সকল ধরনের মুরগির দাম।

শীতকালীন সবজির দামে স্বস্তি
শীতের সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় পাকা টমেটো, গাজর, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি তুলনামূলক কম দামে কিনতে পারছেন ক্রেতারা। এসব সবজি বাজার ও ভাসমান সবজির দোকানগুলোতে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যেই মিলছে। বাজারে পাকা দেশি টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, ভারতীয় টমেটো ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, শশা ২০ থেকে ৩০ টাকা, শিমের ৪০ টাকা, বেগুন ২০ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাজর ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, ‘শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। আড়তদারেরাও কম দরে বিক্রি করছে। যার কারণে দাম কমছে।’
বাজারে সব থেকে দামি সবজির তালিকায় রয়েছে পটল, ঢেঁড়স, করলা। যা এখনও একশ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজি মূলত গ্রীষ্মকালীন হওয়াতেই সরবরাহ কমের পাশাপাশি বাড়তি দাম রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

কমেছে আদা ও পেঁয়াজের দাম
আমদানি বাড়ায় কমেছে পেঁয়াজ ও আদার দাম। অপরিবর্তিত রয়েছে রসুনের দাম। তবে বিক্রেতারা জানান, বাজারে নতুন পেঁয়াজ (গাছসহ পেঁয়াজ) আসতে শুরু করেছে। তাছাড়া আমদানিও বেড়েছে। যে কারণে দাম কমতে শুর করছে।
বাজারে আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আর মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকায়। বলা যায় গত এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমেছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর চায়না আদা ১৮০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। হিসেবে আদার দাম কমেছে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আর দেশি রসুন বাজার সংকট থাকলেও চায়না রসুনের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। খুচরা বাজারে আমদানি রসুন মান ও জাতভেদে ১৯০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বেড়েছে মুরগির দাম
গতকাল নগরীর অন্যতম রেয়াজউদ্দিন বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯৫ টাকা দরে। যা গত দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল কেজিপ্রতি ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা কেজি দরে। আর গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২০ টাকা বেড়ে ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা দরে। হিসেবে এ কয়দিনে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকার বেশি। তাছাড়া ব্রয়লারের পাশাপাশি বেড়েছে সোনালী ও লাল কক মুরগির দামও। গত সপ্তাহে ৩০০ টাকায় যেসব সাইজের পাকিস্থানী কক মুরগি বিক্রি হয়েছে তা গতকাল ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে মুরগি সরবরাহকারী ও ব্যবসায়ী সমিতির সচিব মোজাম্মেল হক বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে মুরগির দাম আরও বেড়েছে। আমরা খামার পর্যায়ে কিনেছি ১৬৫ টাকার বেশি। বড় কোম্পানিরা ব্রয়লারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।
পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও সে হিসেবে ডিমের দাম কমেনি। বাজারে ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়।

আগের দামে ফিরেছে গরু ও খাসির মাংসের দাম
বাজারে গত সপ্তাহের মাঝামাঝিতে গরু ও খাসির মাংসের দাম নড়েচড়ে ৫০ টাকা কমেছিল। তা আবার গতকাল থেকে আগের দরেই ফিরে এসেছে। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকায় ও খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। যা গত দুইদিনের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা।

কমেনি মাছের দাম
পুরো ডিসেম্বর মাস ধরে সামুদ্রিক, লেক ও দেশি চাষের মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমার কোন প্রভাব বাজারে পড়ে নি।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রিমন দাস বলেন, মাছের সরবরাহ বেড়েছে। এটি মাছের সিজন। কিন্তু ফিশারি ঘাটের আড়তদারেরা মাছের বাজার নিয়ন্ত্রণ করাতে খুচরা ব্যবসায়ীদের কিছু করার থাকে না।
বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী চাষের বাটা মাছ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ১ হাজার, টেংরা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা ও কাঁকড়া প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এছাড়া চাষের রুই ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা, কাতলা ৩০০ থেকে ৪২০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাঁচকি ৪০০ টাকা, কৈ ২০০ থেকে ৩৮০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশী শিং ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, শোল ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, মেনি মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, চিতল ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, সরপুঁটি ২০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সমুদ্রের মাছের মধ্যে লইট্যা ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, পোয়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, সাদা রূপচাঁদা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ও কালো রুপচান্দা ৩৮০ থেকে ৭০০ টাকা ও ইলিশ মাছ ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

সুখবর নেই চালের বাজারে
এদিকে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বাড়তে থাকা চালের বাজারে ফেরেনি সুখবর। বাজারে এখনো মানভেদে চাল বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ীরা বলেছেন ‘দেশীয় বাজারে ধানের দাম বাড়তি ও আমদানি হলেও তুলনামুলক বাড়তি দরে বুকিং করাতে চালের দাম কমছে না।

অপরিবর্তিত মুদিপণ্যের বাজার
মুদিপণ্যের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও কমেছে চিনির দাম। তবে খোলা সয়াবিন ও খোলা সরিষার তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। গতকাল ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪৫ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৭৫ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১২৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১২০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। হিসেবমতে তবে প্যাকেটজাত ও খোলা চিনির দাম কমেছে কেজিতে পাঁচ টাকা আর সয়াবিনের দাম বেড়েছে লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
খাতুনগঞ্জের ডাল ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ‘ডালের আমদানিতে দর কমেনি যার কারনে ডালের দর কমছে না।’