রাজিব শর্মা
ইলিশ মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর বাজারে মাছের সরবরাহ বাড়লেও চড়া দামের কোন পরিবর্তন আসেনি। তার সঙ্গে অপরিবর্তিত রয়েছে ব্রয়লার, ডিম, মাংসসহ সকল ধরনের মুদি
পণ্যের বাজার।
ইলিশ মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ২৫ অক্টোবর। এরপর থেকেই জেলেরা নদীতে নেমেছেন। বাজারেও উঠছে নতুন ইলিশ। তবে দাম কমার পরিবর্তে আরও বেড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরের অন্যতম কাঁচাবাজার রেয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়, আর এক কেজির ইলিশের দাম দুই হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজারের মতো। আর ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ২০০ গ্রাম ওজনের জাটকার দাম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
ইলিশ মাছের দাম শুনে ক্রেতা মো. আবু জাফর বলেন, ‘বাজারের এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম দিয়ে ৩ কেজি গরুর মাংস পাওয়া যাবে। কোন মাছই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার নিচে কেনা যায় না। মুরগির বাজারও একই। তাছাড়া বাজার তদারকিও নেই ও অসাধু ব্যবসায়ী দমনের কোন বিষয়ও কারও মাথায় নেই।’
মাছের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ইলিশ বিক্রেতা তাপস দাস বলেন, ‘এ বছর শুরু থেকেই বাজারে ইলিশের দাম চড়া। বিশেষ করে জেলেদের সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলার খরচ বাড়ার পাশাপাশি অনান্য আনুসঙ্গিক খরচ বেড়েছে। ইচ্ছে থাকলেও হিসেব মিলিয়ে কম দরে বিক্রি করতে পারছি না । মাছের দাম বাড়ায় আমাদেরই লোকসান। কারণ এখন আগের মতো মানুষ মাছ কিনছে না।’
বিক্রেতা মো. আলামিন বলেন, ‘মাছ ধরা বন্ধ থাকুক বা সরবরাহ কম হোক, এটি কোন সমস্যা না। সমস্যা খরচ বাড়াতেই দামের পরিবর্তন হচ্ছে না। ইলিশ মাছের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ফিসারিজ হ্যাচারি মালিকরা। জেলেরা তাদের সঙ্গে চুক্তি করে মাছ ধরেন। এখানে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোন কারসাজি নেই।’
এছাড়া ইলিশের পাশাপাশি অনান্য মাছের দামেও তেমন পরিবর্তন আসেনি। বরং কিছু মাছের দাম আরও বেড়েছে। বাজারে সাইজভেদে প্রতিকেজি কোরাল মাছ বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা, চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৭৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া, খাল-নদী ও চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, ছোট আকারের পাবদা ৪০০ টাকা, মাঝারি সাইজের ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, পুঁটি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া বড় সাইজের ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০ থেকে ২৮০ টাকা, কৈ ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং পাঙাস ও সিলভার কার্প ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। হিসেবে পাঙ্গাস, নাইলোটিকা, পাবদা, কোরাল মাছের দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকার বেশি বেড়েছে।
মুরগি ও ডিমের দামে পরিবর্তন আসেনি
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে চড়া দামের পরিবর্তন আসেনি মুরগি, ডিম, গরু ও ছাগলের মাংসের বাজার । বাজারে মাঝারি সাইজের ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১৮০ টাকা, বড় সাইজের ১৭০ টাকা। আর সোনালি মুরগির দাম ২৯০ থেকে ৩৩০ টাকা, লেয়ার ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। হিসেবে সপ্তাহ ও গত এক মাসে মুরগির দামে তেমন পরিবর্তন আসেনি। এছাড়া ডিমের দামও রয়েছে অপরিবর্তিত। প্রতিডজন ফার্মের লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা, সাদা ডিম ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ও দেশী হাঁসের ডিম ১৯০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
পরিবর্তন নেই গরু ও ছাগলের মাংসে
অন্যদিকে, গরু ও খাসির মাংসের দামও রয়েছে অপরিবর্তিত। বলা যায়, গত দুই বছরেও এই দুইটি প্রাণির মাংসের দামে কোন পরিবর্তন আসছে না। বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পশুর সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকার পাশাপাশি খামারিরা দাম কমাচ্ছে না বলেই, মাংসের বাজাওে পরিবর্তন আসছে না।
বেড়েছে মোটা চালের দাম
অনান্য চালের বাজারে উত্তাপ থাকলেও গত এক সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে এক-দুই টাকা কমেছে। গতকাল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৭২ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চালের দাম এখন ৭৫ থেকে ৯৫ টাকা। ব্রি-২৮ চাল ৬২ টাকা ও মোটা ধরনের স্বর্ণা চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। হিসেবে গত এক মাসে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা।
সহনীয় রয়েছে আলু
বাজারে এখনো দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে আলুর। বাজারে গত এবছর ধরে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে কম দামের সবজির মধ্যে রয়েছে শুধু পেঁপে। প্রতি কেজি পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তাছাড়া শীতের আগাম সবজির সরবরাহ বাড়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে বেগুনসহ বেশ কয়েকটি সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। গতকাল প্রায় সকল সবজিই ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে খুচরায় বিক্রি হতে দেখা যায়। যার মধ্যে প্রতি কেজি করলার দাম ৬০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, কলা হালি প্রতি ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ধুন্দল, কাঁকরোল, ট্যাঁড়স ৫০ থেকে ৬০, পটোল ৬০, কচুরমুখী ৪০ টাকা, শিম ৬০ টাকা, ঝালি কুমড়ো, ফুল কপি ও পাতা কপির পিস ৪০ টাকা। সাদা গোল বেগুন ও লম্বা ৬০ টাকা। টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চায়না গাজর ও দেশি গাজর । প্রতি কেজি চায়না গাজরের দাম ১৫০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তি । ভালো মনের দেশি পেঁয়াজ কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর প্রতিকেজি দেশি রসুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, আদা ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ‘নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলে কমে যাবে দাম।’ এছাড়া অনান্য প্রায় সকল মুদিপণ্যের দাম অপরির্তিত রয়েছে বলে জানান মুদি ব্যবসায়ীরা।



















































