সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বা কালো আইন অবিলম্বে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। একই সঙ্গে আজকের মধ্যে কালো অধ্যাদেশ বাতিলের কোনো নির্দেশনা না আসে তাহলে সচিবালয়ে সব প্রকার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।

রোববার (২৫ মে) দুপুরে সচিবালয়ে ১ নম্বর গেটের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়ো হয়ে বসে পড়েন এবং সেখানে বসেই তারা এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

এ সময় পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর বলেন, সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বা নিবর্তনমূলক আইনের খসড়া অনুমোদিত, এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আমরা সেই কালো আইন, নিবর্তনমূলক আইন প্রত্যাহারের জন্য আমরা আজ সবাই এখানে এসেছি। এ আইনের বিরুদ্ধে সবাই সংযুক্ত হয়েছে। কারণ এই আইনের স্টেকহোল্ডার আমরা এ কর্মচারীরা। অথচ আমাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ, আলোচনা না করে একটা নতুন চালু করা হয়েছে।  যা সাধারণ কর্মচারীদের অধিকার খর্ব করা হবে।

তিনি বলেন, এ আইনের ফলে কর্মচারীদের একটা নোটিশে কারণ দর্শানোর আগেই চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে। আমরা এ ধরনের কালো আইন মানবো না। আমরা এ কালো আইন সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কাজে মনোনিবেশ করতে পারছি না। কারণ আমরা সচিবালয়ের শান্তিপ্রিয় ও সরকারের অনুগত কর্মী। যারা সরকারের গঠনমূলক সব কাজে অংশ করে থাকি। কিন্তু সরকারের ভেতরে ঘাপটিমেরে থাকা স্বার্থান্বেষী একটি মহল এ আইনটা প্রয়োগ করে নিজেরা সুবিধা নিতে চায় ও সাধারণ কর্মচারীদের বিপদে ফেলতে চায়। তাদের এ অবপ্রয়াস যেকোনো মূল্যে রুখে দেবো।

বাদিউল কবীর বলেন, আজকে যারা এখানে উপস্থিত হয়নি তাদের বলতে চাই, যখন এ আইন প্রয়োগ হবে তখন কেউ তাদের ন্যার্য কথাটি বলতে পারবে না। এজন্য আমরা এ আইনটি সম্পূর্ণরুপে প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম ও আলোচনা উভয় চলতে থাকবে। এ আইন অবিলম্বে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়বো না।

এ সময় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের নজরুল ইসলাম বলেন, আজকের মধ্যে এ কালো অধ্যাদেশ বাতিলের কোনো নির্দেশনা না আসে তাহলে সচিবালয়ে সব প্রকার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। উপদেষ্টাদের কোনো গাড়ি ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এ কালো অধ্যাদেশ আমাদের বুঝিয়ে লাভ নেই। আমাদের পরিষ্কার কথা এ অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে। আমরা এ পর্যন্ত এ বিষয় দুইজন উপদেষ্টাদের সঙ্গে দেখা করেছি। কিন্তু তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। আজকের মধ্যে যদি আমাদের আস্বস্ত না করা হয় তাহলে সচিবালয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা কাজ বন্ধ করে নিচে অবস্থান করবে।

সচিবালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, কাজ বাদ দিয়ে সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করছেন শত শত কর্মকর্তা কর্মচারী। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে তারা জড়ো হওয়ার পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা দপ্তর ঘেরাও করেছেন। দুপুর পৌনে ১২টায় তারা গৃহায়ন উপদেষ্টা দপ্তরের সামনে বসে পড়েছেন। এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গৃহায়ণ উপদেষ্টা দপ্তরের সামনে আসার সময় সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা সচিবালে ঢুকছিলেন। বিক্ষোভকারীরা কিছু সময়ের জন্য উপদেষ্টার গাড়ি আটকে দেন।

এ সময় কর্মচারীরা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টার দপ্তর ঘেরাও করে সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। এরপর মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের এক নাম্বার গেট অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।  এরপর তারা ৬ নং ভবনের সাসনে বাদাম তলায় মিছিল নিয়ে অবস্থান নেন এবং আজকের মধ্যে এ বিষয়ে সুরাহা না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করা না হলে আগামীদিনে সচিবালয় অচল করাসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

মিছিল করার সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ের কর্মচারী, এক হও লড়াই কর; অবৈধ কালো আইন, মানি না মানবো না; আমাদের দাবি আমাদের দাবি, মানতে হবে মানতে হবে-ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

এরআগে সকাল ১০টার কিছু পরে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম ও মহাসচিব মো. মুজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মিছিল শুরু হয়। ৬ নম্বর ভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনে দিয়ে নতুন ভবন, ক্লিনিক ভবনের সামনে দিয়ে ১১ নম্বর ভবনের সামনে আসে মিছিলটি। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকা প্রদক্ষিণ করতে থাকেন।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধনে অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কারণ অধ্যাদেশের খসড়ায় শৃঙ্খলা বিঘ্নিত, কর্তব্য সম্পাদনে বাধা, ছুটি ছাড়া কর্মে অনুপস্থিত, কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানির জন্য কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরিচ্যুতির বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য চারজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।